১৪ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোর জেলা পরিষদ মার্কেট
যশোর জেলা পরিষদ মার্কেট : কোটি টাকা বাণিজ্যের টার্গেট!

: : নতুন বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরাতন ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর জেলা পরিষদের মার্কেটে নতুন করে ‘অনুমোদন’ ছাড়াই ৩৩টি দোকান নির্মাণ শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই দোকানগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কোটি টাকার বাণিজ্য। বরাদ্দের জন্য দোকানপ্রতি নেয়া হচ্ছে তিন থেকে চার লাখ টাকা ।

এদিকে এই নিয়ে পুরানো ও নতুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, সোমবার দুপুরে মার্কেটে পুরানো ব্যবসায়ীরা দোকান নির্মাণকাজ শুরু করলে জেলা পরিষদ বাধা দেয়।

এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগকারীরা বলছেন, ‘পুরাতন ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক দোকান বরাদ্দ না দিয়ে; মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বরাদ্দ দিচ্ছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।’


ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে যশোর জেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে ও যশোর ইনস্টিটিউট মাঠের একপ্রান্তে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু সম্প্রতি যশোর ইনস্টিটিউটের মাঠ উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ শুরু করলে ইনস্টিটিউট অংশের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকালে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় উন্নয়নকাজ শেষ হলে এসব ব্যবসায়ীকে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের মার্কেটে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসানের পর ইনস্টিটিউট তার সীমানায় প্রাচীর দিয়ে দেয়। সেই প্রাচীর ঘেঁষে যশোর জেলা পরিষদের মার্কেটে নতুন করে ৩৩টি দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এজন্য কোনো ধরণের ‘অনুমোদন’ নেয়া হয়নি।

সূত্রের অভিযোগ, দোকানগুলো বরাদ্দের জন্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। প্রথম দিকের দশটি দোকান নতুন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর এর পরের দোকানগুলো পুরানো ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বরাদ্দ বাবদ এই দোকানগুলো থেকে নেয়া হচ্ছে ৩ লাখ টাকা করে । কোনো ধরণের রশিদ ছাড়াই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এই অর্থ গ্রহণ করছেন। দোকান বরাদ্দ পাওয়ার আশায় ব্যবসায়ীরাও মুখবুজে এই টাকা পরিশোধ করছেন। ফলে অনুমোদন ছাড়াই এই ৩৩ দোকান নির্মাণ করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কোটি টাকার বাণিজ্যে নেমেছেন বলে তাদের দাবি।


এদিকে জেলা পরিষদ তাদের মিশন অনুযায়ী দোকানঘর নির্মাণ শুরু করলে মার্কেটের পুরাতন ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোমবার ১২ পুরাতন ব্যবসায়ী জেলা পরিষদ মার্কেটে দোকান তৈরি শুরু করেন। তৈরির একপর্যায়ে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্মাণে বাধা দেন। এসময় জেলা পরিষদ কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জানান, এখানে প্রতিটি দোকান নির্মাণ করতে হলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে। এসময় জেলা পরিষদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।


যশোর ইনস্টিটিউট মার্কেট অংশের সভাপতি বাবু বিশ^াস অভিযোগ করে বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের মাঠ থেকে যখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছিল; তখন আমাদের বলা হয়েছিলো জেলা পরিষদের মার্কেটে স্থান দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক আমরা ১২ ব্যবসায়ী সরে আসি। আজ জেলা পরিষদের মার্কেটে দোকান নির্মাণ করতে আসলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এখন দোকান নির্মাণ করতে দিবে না; উল্টো প্রতিটি দোকানের জন্য তিন থেকে চার লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছে।’


তিনি জানান, পুরাতন ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ জায়গা আগে অগ্রাধিকার না দিয়ে জেলা পরিষদ নতুন ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নতুন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দোকান বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।’


নাজমুল হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা করি পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা। এতো টাকা দিয়ে দোকান বরাদ্দ নিবো কিভাবে। জায়গা না দিলে আমরা ব্যবসা করবো কিভাবে।’ জায়গা নতুন ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দিলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।


এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) একে এম শফিকুল আলম বলেন, ‘দোকান বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের দু’পক্ষ জড়ো হতে থাকে। এসময় উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ ঘটনাস্থল যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।


এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান বলেন, জেলা পরিষদের মার্কেটে ‘অস্থায়ী দোকান’ নির্মাণ করা হচ্ছে। অস্থায়ী দোকান করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া লাগে না। ওই স্থানে যেহেতু আগেই মার্কেট ছিল, তাই দোকানগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।


এ ব্যাপারে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, মার্কেটে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে দোকান বরাদ্দ নিয়ে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram