নিজস্ব প্রতিবেদক : মা ও ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা পারভীন উর্মি। যশোরে হত্যার পর মাগুরার শালিখায় নিয়ে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করে মরদেহ দাফনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোছলের সময় ‘আঘাতের চিহ্ন’ দেখতে পাওয়ায় ভেস্তে যায় ‘হত্যা ধামাচাপা’ দেয়ার চেষ্টা। পরে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছে।
একইসাথে আটক করা হয়েছে মা আইরিন পারভীন (৫৫) ও ভাই ফয়েজ রাজ্জাক ফারদিনকে (২৩)। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন তারা। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে গত ২৫ এপ্রিল রাতে যশোর শহরের রেলরোড বাগমারা পাড়ায়।
নিহত ফারহানা মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্ট গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মেয়ে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ভাই ফারদিন আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের এলএলবির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এদিকে, পিতার রেখে যাওয়া ৮০ লাখ টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকা- বলে দাবি করেছেন ফারহানা উর্মির চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম। তিনি আটক মা ও ভাইকে আসামি করে মামলাও করেছেন।
ফারহানা হত্যাকা- নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) জুয়েল ইমরান কোতোয়ালি থানায় প্রেসব্রিফিং করেন।
প্রেসব্রিফিংয়ে জুয়েল ইমরান জানান, নিহত ফারহানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিছুদিন পূর্ব থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মা ও ভাইয়ের সাথে যশোর শহরের রেলরোড বাগমারা পাড়ায় ইমরান কবীরের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। তাদের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রিহট্ট গ্রামে। পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে তার ভাই ও মা প্রথমে পিটিয়ে এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
তার মা আইরিন পারভীন ও ভাই ফারদিন ২৬ এপ্রিল বিকেলে উর্মির লাশ নিয়ে মাগুরার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করেন। কিন্তু গোসলের সময় তার গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হয়। ফলে এলাকার লোকজন বিষয়টি শালিখা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। শালিখা পুলিশ যশোরের কোতোয়ালি থানা পুলিশকে অবহিত করে। এরপর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে উর্মির লাশের ময়না তদন্ত শেষে আবারো দাফনের জন্য মাগুরার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা।
এরই মধ্যে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উর্মির ভাই ফারদিন ও মা আইরিন পারভীনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর তারা হত্যার দায় স্বীকার করলে ফারহানার চাচাতো ভাই রবিউল ইসলামর যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এদিনই ওই মামলায় তাদের দু’জনকে আটক দেখানো হয়।
অপরদিকে এই মামলার বাদী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, আইরনের পিতা জীবিত থাকাকালিন তার নামে ব্যাংকে ৮০ লাখ টাকা ডিপোজিট করে রেখেছিলেন। পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে তাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। ওই সম্পত্তি বিক্রির জন্য মাঝেমধ্যে উর্মির মা ও ভাই শালিখা থানা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রামের বাড়িতে আসতেন। কিন্তু জমি বিক্রিতে উর্মি কখনো রাজি ছিলেন না। এদিকে ব্যাংকে ৮০ লাখ টাকার জন্য তার ভাই ফারদিন মায়ের মাধ্যমে উর্মির সাথে চরম দুর্ব্যবহার করতো। জমি বিক্রিতে বাধা ও ব্যাংকে থাকা টাকার জন্য তার মা আইরিন পারভীন ও ভাই ফারদিন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আটক দু’জনকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তাদের দুইজনকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।