নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের খাজুরার শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয় থেকে সুইপার নিরঞ্জন কুমার ঋষিকে ধরে নিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছে আদালত। আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদপর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। একইসাথে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৮ মে’র মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহমেদ এই আদেশ প্রদান করেন। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পেশকার তারেক হোসেন।
সংশিস্নষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিরঞ্জন কুমার ঋষি সদর উপজেলার গহেরপুর গ্রামের ঋষিপাড়ার মৃত পুটিরাম ঋষির ছেলে। তিনি খাজুরার শহীদ সিরাজুদ্দীন কলেজে সুইপার পদে চাকরি করেন। গত ২৭ ফেরুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এসআই রবিউল ইসলাম নিরঞ্জন কুমার ঋষির বিরম্নদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (নং-১১৮) করেন।
মামলায় তিনি উকল্লেখ করেন, একইদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে নিরঞ্জন ঋষিকে গহেরপুর গ্রামের জনৈক মোহাম্মদ আলীর চায়ের দোকানের সামনে থেকে ৫শ’ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করেছেন। পরবর্তীতে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় তার আইনজীবী আরিফুল ইসলাম শান্তি আদালতকে জানান, নিরঞ্জন ঋষি নির্দোষ।
তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে তার কর্মস্থল খাজুরার শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন কলেজ থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ। আইনজীবীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহমেদ খাজুরার শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কাছে নিরঞ্জন ঋষিকে আটক অবস্থান বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
পরে শিড়্গা প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ আমিনুর রহমানের আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঠ প্রস্তুতির জন্য নিরঞ্জন ঋষিসহ কর্মচারীরা সারাদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করেছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে নিরঞ্জন ঋষিকে পুলিশ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মসজিদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তিনি লোকমুখে শুনেছেন, পুলিশ গাঁজার অভিযোগে তাকে আটক করেছে। অধ্যড়্গরে এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেন যে, পুলিশের করা মামলায় নিরঞ্জন ঋষিকে সদর উপজেলার গহেরপুরে মাগুরা সড়কের মোহাম্মদ আলীর চায়ের দোকানের সামনে থেকে ৫শ’ গ্রাম গাঁজাসহ হাতেনাতে আটকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি জিআর মামলায় একইদিন দুপুরে নিরঞ্জন ঋষির স্ত্রীকে নিজ বাড়ি থেকে মাদকসহ আটকের দাবি এবং তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
আসামি পক্ষর দাবি, যেহেতু একইদিন তাদের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের দাবি করা হয়েছে সেহেতু ওইদিন কোনো ব্যক্তি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মাদক বিক্রি করবেন এটা কল্পনাতীত। আসামিপড়্গ আরো দাবি করেছে যে, শিড়্গা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরঞ্জন ঋষিকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আসামি পক্ষের এই অভিযোগ গুরুতর।
বিষয়টি সঠিক তদন্ত না হলে ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত হবে বলে আদালত মনে করেন। এ কারণে অভিযোগের তদন্ত এবং সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।