এস হাসমী সাজু : নবজাতক কন্যাশিশুকে টিকা দেওয়ার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ইপিআই টিকা কেন্দ্রে আসেন নানা যশোর ঘোপ সেন্ট্রালরোড এলাকার বাসিন্দা ও পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের বসুন্দিায় শাখার ইনর্চাজ আয়ুব হোসেন। টিকা কেন্দ্রে দায়িত্বরত সেবিকা ময়না বেগম জানান, প্রথম দফায় শিশুর হাতে ও পায়ে যে ৪টি টিকা দেওয়া হয়, তার মধ্যে বিসিজি ও পেনটা নামক দুইটি টিকা সরবরাহ নেই। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই প্রতিষ্ঠানের ইপিআই টিকাকেন্দ্রে শিশুদের অতি মূল্যবান বিসিজি ও পেনটা টিকার সংকট চলছে।
<<আরও পড়তে পারেন>> মণিরামপুরে ১শ’ শয্যার হাসপাতালের দাবি জানালেন এমপি ইয়াকুব আলী
তিনি এই কেন্দ্রে টিকা না পেয়ে সদর উপজেলা ও পৌরসভার টিকা কেন্দ্রে যান। সেখানেও এই ২টি টিকা না থাকর কথা জানানো হয় তাকে। পরে সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করেন আয়ুব হোসেন। সেখানেও একই তথ্য পান তিনি। ফলে আইয়ুব হোসেন নির্ধারিত সময়ে তার নাতনিকে টিকা দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন।
ইপিআই সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিসিজি টিকা শিশুদের যক্ষা রোগ প্রতিরোধের জন্য জন্মের পর থেকে বাম বাহুর উপরের অংশে চামড়ায় দেওয়া হয়। এছাড়া পেনটা টিকা শিশুদের ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুুষ্টাংকার, হেপাটাইটিস—বি, হিমোফাইলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জার—বির মত মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধের জন্য কাজ করে। যা শিশুদের জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ টিকা দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) আওতায় সরকারিভাবে বিনামূল্যে এসব টিকা সরবরাহ করা হয়। তবে গত ২৭জানুয়ারি থেকে যশোর জেলায় ১০টি স্থায়ী ও ২হাজার ২৫৬টি অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রে এই বিসিজি ও পেনটা টিকা সরবরাহ নেই। তবে যশোর জেনারেল হাসপাতারের ইপিআই কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, সরবরাহ বন্ধের পরেও তাদের কাছে কিছু টিকা ছিল যা গত ৩দিন আগে ফুরিয়ে গেছে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সময়মতো টিকা দিতে না পারলে শিশুদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝঁুকি বাড়বে।
এদিকে গত রোববার ও সোমবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ইপিআই কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকেই হাসপাতালে টিকাদান কেন্দে সামনে শিশুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবকরা। কিন্তু বিসিজি ও পেনটা টিকা না থাকায় অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এক প্রকার অনিশ্চয়তা নিয়ে তারা বাড়ি ফিরছেন।
শহরতলী বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘নবজাতক পুত্রের টিকা দিতে এসে ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র থেকে ২টি টিকা দিয়েছে আর দুটি দেয়নি। টিকা কার্ডে লেখা সময় পার হয়ে গেছে। এখন কী করবো বুঝতে পারছিনা’
শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাজিয়া বেগম বলেন, ছেলেকে ১০দিন ধরে বিসিজি টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালে ও টিকা কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সরবরাহ নেই বলে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন সেবিকারা। এ টিকা ফার্মেসিতেও বিক্রি হয় না। সরকারি হাসপাতাল থেকে নিতে হয়। আমার ছেলে অসুস্থ হলে দায়ভার কে নেবে?
যশোর জেনারেল হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ নূরুল হক বলেন, গত ১সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের স্টোরে বিসিজি ও পেনটা টিকার সরবরাহ নেই। প্রতিদিন অসংখ্য অভিভাবক শিশুকে এসব টিকা দেয়ার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডাক্তার মাহবুবুর রহমান জানান, রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নবজাতকের এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন রোগের টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া বিসিজি টিকা হলো যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক। শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ টিকা দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে টিকা দেয়া না গেলে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ জনান, সরবরাহ না থাকায় বিসিজি ও পেনটা টিকার সংকট রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসব টিকার সরবরাহ দেয়া হয়। সেখানেও না থাকায় হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে আসা অভিভাবকদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে জেলায় বিসিজি ও পেনটা টিকার সরবরাহ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এসব টিকা ঢাকার ইপিআই ভবন থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সেখানেও এই টিকা নেই। তবে আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এই টিকা পাওয়া যাবে। সরবরাহ শুরু হলে শিশুদের নিয়মিত টিকা দেয়া হবে।