এস হাসমী সাজু : যশোরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে আইইডিসিআর’র গবেষক দল। ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) গবেষক দল শনিবার বিকেল থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। গবেষক দল পৌর এলাকার সরবরাহকৃত পানি, ফুটপাতে বিক্রি হওয়া তরমুজসহ বেশকিছু নমুনা পরীক্ষা করবেন। পাশাপাশি কিছু রোগীর বাড়ি গিয়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও নমুনা বা আলামত সংগ্রহ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরে সংক্রামক ব্যাধি ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় এর কারণ নির্ণয়ে তৎপর হয় স্বাস্থ্যবিভাগ। এরই সূত্র ধরে শনিবার ঢাকা থেকে যশোরে আসেন আইইডিসিআর’র নয় সদস্যের গবেষক দল। গতকাল তারা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন।
আজ রোববার গবেষক দল শহরের পৌরসভার ধর্মতলা ও আরবপুর এবং শংকরপুর ও খুলনা স্ট্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের শরীর থেকেও আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবেন বলে জানা গেছে। দলটি শহরের ফুটপাতে তরমুজ বিক্রেতাদের কাছ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করবেন। এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস।
সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস আরও জানান, আইইডিসিআর গবেষক ডা. জেবুন নেছার নেতৃত্বে ৯সদস্যর একটি তদন্ত দল শনিবার বিকেলে যশোরে এসেছেন। তারা যশোর সিভিল সার্জন অফিসে রির্পোটিংয়ের পরই কাজ শুরু করেন। পরে তারা সিভিল সার্জন অফিসের ফোকাল পারসন মেডিকেল অফিসার অনুপম দাসকে সাথে নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ থেকে যশোর জেলায় সংক্রামক ব্যাধি ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। সেটি বর্তমানেও অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে ডায়রিয়ায় চারজনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক সমাজের কথা’য় তথ্য বহুল সংবাদ প্রচার হলে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়ে। তারা রোগের কারণ নির্ণয়ের জন্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে শনিবার ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল গবেষণার জন্যে যশোরে আসেন।
এদিকে আইইডিসিআরের গবেষক ডাক্তার জেবুন নেছা জানান, ৯ সদস্যর একটি গবেষক দল নিয়ে তদন্ত করতে শনিবার যশোরে এসেছি। যশোর হাসপাতালে ডায়রিয়ার তথ্য সংগ্রহ করেছি। আজ রোববার থেকে সরেজমিন ও রোগীর বাড়ি গিয়ে তথ্য ও নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করবো। পরে ঢাকায় রিপোর্ট প্রদান করবো। সেখান থেকে কর্তৃপক্ষ যশোর সিভিল সার্জনকে অবগত করলে সিভিল সার্জন গণমাধ্যকে তথ্য জানাবেন।
এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ২০৫জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২৮জন হাসপাতালের বহিঃবিভাগ থেকে এবং ৭৭জন নারী ও পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ৫৮জন ডায়রিয়ার রোগী অবস্থান করছেন। তথ্যমতে, শুধুমাত্র শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত (৮ঘণ্টায়) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ রোগী।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি সাথে সকালে গরম ও রাতে ঠান্ডা এবং মাঝে দুপুরে ভ্যাপসা গরম অনুভব হচ্ছে। এছাড় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ভারি খাবার খাওয়ার কারণে হজমের ত্রুটিতে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য তিনি রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি কলা ভর্তা, ফেনা ভাত, ডাবের পানিসহ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুণ অর রশিদ জানান, হঠাৎ করে শহরে ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১০/১২ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হত এখন সেখানে ৫০/৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশের রোগীর বাড়ি শহরে ধর্মতলা, আরবপুর, খুলনাস্ট্যান্ড এবং শংকরপুর এলাকায়। ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার আইইডিসিআরের গবেষক দল ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।