এস হাসমী সাজু : যশোর হাসপাতালে সংক্রামন ব্যাধি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। রোববার ভর্তি হয় ৯২ রোগী। এরমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২২ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয় ৯২ রোগী। এর মধ্যে রোববার ২৬জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয় ও ২৫জনকে পালতক দেখানো হয়েছে। এছাড়া রোববার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পযর্ন্ত ১১ ঘণ্টায় ৩৩জন রোগী নতনি করে ভর্তি হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৬৮ রোগী। এরমধ্যে ৭ শিশু, ৩৪ মহিলা রোগী ছিল। এর মধ্যে ২জন চিকেন পক্সে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন।
সংক্রামণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান উপশহর এলাকার জাকির হোসেন (৬৫)। উপশহর এলাকার মৃত রহিম মোল্ল্যার ছেলে। তার ভর্তি রেজি নং-২৪৮৮৭/০৯। মৃতের স্বজন তানভীর আহম্মেদ জানান, বৃহস্পতিবার বমির সাথে পায়খানা শুরু হয়। এ অবস্থা ওইদিন গভীর রাত দেড়টার দিকে দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।
১৮ মে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে মারা যান যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের মৃত শামছুদ্দিনের ছেলে শাহিন হোসেন(৩৫)। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পথে ডা.আব্দুর রাজ্জাক কলেজের দারোয়ান শাহিদুল ইসলাম(৩৩) গতকাল রাতে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন।
সংক্রামণ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ৫শয্যার ধারণ ক্ষমতার ওয়ার্ডে যেখানে জায়গা মিলেছে সেখানেও আছে রোগী। ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরে, সিড়ির নিচেও রোগীদের ঠাঁই হয়েছে।
ওয়ার্ডের মধ্যে জায়গা না থাকায় হাসপাতালের ৩য় তলার রেডজোনে পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকরা জানান, অধিকাংশ রোগী অতিরিক্ত মৌসুমী ফল-মূল খেয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী নাছিমা আক্তার জানান, বাড়িতে বমি ও পায়খানা শুরু হয়। পরে স্বজনদের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। একই ভাবে আশিকুর রহমান জানান, রোববার দুপুরে খাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ি পরে পায়খানা শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত সুস্থ না হওয়ার কারনে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
হাসপাতালের সংক্রমণ ওয়ার্ডে ভর্তি একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতালের প্রবেশ গেটের পাশে পানির কল দিয়ে খাবারের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। রোগী ও স্বজনের দাবি ওয়ার্ডের পাশে নষ্ট পানির কল মেরামত করা হোক।
এ ব্যাপারে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, বৃষ্টি সাথে সকালে গরম ও রাতে ঠান্ডা এবং মাঝে দুপুরে ভ্যাপসা গরম অনুভব হচ্ছে। এছাড়া ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ভারি খাবার খাওয়ার কারণে পেটের হজমে ত্রুটি হয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য তিনি রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি কলা ভর্তা, ফেনা ভাত, ডাবের পানিসহ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেলিম রেজা বলেন, হঠাৎ করে দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা এবং বাতাশে রোটা ভাইরাস প্রবাহের কারনে এবং সিজলাল ফল-মুল খেয়ে গরমে মানুষ ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ জানান, ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে কেই মারা যাননি। তবে যে তিনজন মারা গেছেন তারা হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু ডায়রিয়ার ইতিহাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া যারা ভর্তি আছেন তারা অধিকাংশ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের বেডের সমস্যা থাকায় বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে পুরুষদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ ও সেবায় কোন কমতি নেই।