এস হাসমী সাজু : হঠাৎ করে সংক্রামণ ব্যাধি ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে যশোরাঞ্চলে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মহিলাসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩৫ রোগী। এরমধ্যে ৬৭ জনকে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাকীরা বহিঃবিভাগ থেকে প্রাথমিক সেবা নেন। বুধবার রাতে ৫ শয্যার ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ৪১ রোগী।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ ডায়েরিয়ার জন্য দায়ী রোটা ভাইরাস। আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর তরমুজ খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে কেমিক্যাল মিশ্রিত তরমুজসহ অন্যান্য খাদ্য বিষক্রিয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত ৩৮ ঘণ্টায় হাসপাতালে এসেছে ২৩৫জন। এর মধ্যে ৬৭ জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বহিঃবিভাগ থেকে প্রাথমিক সেবা নিয়েছেন ১৬৮জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ। সুস্থ হয়ে ২৬জন বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে অবস্থান করছেন ৪১জন। এর মধ্যে ২জন চিকেন পক্স আক্রান্ত রোগীও রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টা পযন্ত হাসপাতালে পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে বৃষ্টি, ভাপসা গরম এবং বাড়িতে ভারি ও পেট গরম হয় এমন খাবার খাওয়ার কারনে আক্রান্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনুমান করছেন চিকিৎসকরা। এদিকে মঙ্গলবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে সংক্রামণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল গফুরের(৮০) মৃত্যু হয়। তার বাড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা অমৃত বাজার গ্রামে।
মৃতের ছেলে দেলোয়ার হোসেন মুঠো ফোনে জানান, বাড়িতে হঠাৎ করে বমি সাথে পায়খানা শুরু হয়। এ অবস্থা রাত পর্যন্ত চলতে থাকে পরে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টার দিকে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর দুই ঘণ্টার পরে মারা যান। একই ভাবে ডায়রিয়ায় বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যশোর সদর উপজেলার কাজীপুর গ্রামের মৃত গোলাপ মোড়লে ছেলে আব্দুর রাজ্জাক মোড়ল(৫২) মারা যান এবং একই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের বারান্দিপাড়া এলাকার ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী রাহেলা বেগম(৩৫)মারা যান।
সংক্রামণ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ৫ শয্যার ধারণ ক্ষমতার ওয়ার্ড হলেও রোগী রয়েছে ৬৭জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা পযন্ত ৩৩জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে এদিনগত রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত (অথাৎ ১৪ ঘণ্টায়) ৩৪জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। এ সময় হাসপাতালে বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬৮জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ। ওয়ার্ডের মধ্যে জায়গা না থাকায় রোগীদের হাসপাতালের কোরিডোরে ও প্রসুতি ওয়ার্ডে পাশে বারান্দায় থাকার জায়গা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী জাকির হোসেনের সাথে কথা বলে জানান গেছে, মঙ্গলবার বাড়িতে তরমুজ খেয়ে ছিলেন। এর পর থেকে বমি ও পায়খানা শুরু হয়। পরে স্বজনদের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
এ ব্যাপারে শিশু সংক্রমণ চিকিৎসক ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, বৃষ্টি সাথে সকালে গরম ও রাতে ঠান্ডা এবং মাঝে দুপুরে ভ্যাপসা গরম অনুভব হচ্ছে। এছাড় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ভারি খাবার খাওয়ার কারণে পেটের হজমে ক্রুুটি হয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য তিনি রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি কলা ভর্তা, ফেনা ভাত, ডাবের পানিসহ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ।
হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওবাইদুল কাদের উজ্জল বলেন, হঠাৎ করে দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা এবং বাতাসে রোটা ভাইরাস প্রবাহের কারণে মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে হাসপাতালে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে যে সকল রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদের অধিকাংশ রোগের ইতিহাস তরমুজ খাওয়ার পর থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হিমাদ্রী শেখর সরকার জানান, যারা মারা গেছেন তাদের বয়স অনেক বেশি ছিলো। তারা ডায়রিয়ার সাথে বয়স জনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া যারা ভর্তি আছেন তারা অধিকাংশ বাড়িতে তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের বেডের সমস্যা হলেও ওষুধ ও সেবায় কোন কমতি নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে তরমুজ পাকার কথা নয়। তবে কিছু ব্যবসায়িরা তরমুজে রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। আর সে তমুজ খেয়ে মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন।