নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে হত্যাচেষ্টা মামলার সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক সপ্তাহের জন্য অর্ন্তবর্তীকালিন জামিন পেয়েছেন। আগামি ২৩ ফেব্রুয়ারি বাদী ও হত্যাচেষ্টার শিকার ইন্টার্ন চিকিৎসককের সাথে আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
\গতকাল বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল এই আদেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, এটা অস্বাভাবিক জামিন বলে আমি মনে করি। ন্যায় বিচারের পরিপন্থী এই জামিনে বাদীসহ ভিকটিমকে ন্যায় বিচার থেকেও বঞ্চিত করা হলো।
অন্যদিকে এই ঘটনায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির তদন্ত রিপোর্টের কপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কমিটি সাক্ষি না পাওয়ায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি। পরে কলেজ একাডেমিক কমিটির মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয় অভিযুক্তরা আদালতে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য গত ৩১ জানুয়ারি রাতে যশোর মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় আসামিরা পিটিয়ে হাত-পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে হত্যাচেষ্টা করে ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বিপ্লবকে।
আসামিরা হলেন, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন, পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আকাশ, ষষ্ঠ ব্যাচের মেহেদী হাসান লিওন, নবম ব্যাচের সাকিব আহম্মেদ তানিম, সৌম্য সাহা, দশম ব্যাচের তন্ময় সরকার ও সপ্তম ব্যাচের রাসেল।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, যশোর মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে কতিপয় কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও জুয়ার আসর বসিয়ে হৈহুল্লোড় করে আসছিল। এতে করে পাশের কক্ষে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বিপ্লবের পড়াশুনা করতে চরম সমস্যা হতো। সে কারণে এর আগে কয়েকবার তাদের নিষেধ করেন জাকির হোসেন। এতে জাকির হোসেনের উপর তারা ক্ষীপ্ত হন। পরিকল্পনা করা হয় তাকে হত্যা করার। ১০৪ নম্বর কক্ষে আসামিরা গাঁজা সেবন করে আসছিল।
গত ৩১ জানুয়ারি রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই সাতজনসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনে গাঁজা সেবন করছিল। ওই সময় তারা নেশাগ্রস্থ হয়ে হৈহুল্লোড় করছিল। ওই সময় জাকির হোসেন তাদের চিৎকার চেচামেচি করতে নিষেধ করেন। এতে তারা ক্ষীপ্ত হয়ে জাকিরকে ধরে মারপিট শুরু করে। এক পর্যায় তাকে বেদম পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়। জাকির হোসেনের হাত-পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে ফেলে ওই সন্ত্রাসীরা।
শুধু তাই নয় জাকির হোসেনের মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারা রাতেই মােটরসাইকেলটিও অন্যাত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। এসময় জাকির হােসেনের চিৎকারে আশপাশের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেছেন, এই ঘটনার পরে কোতোয়ালি মডেল থানায় এজাহার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। ফলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই ব্যাপারে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ১৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এই মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।
কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার এজাহারভুক্ত সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক তাদেরকে আগামি ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে অর্ন্তবর্তীকালিন জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে ওইদিনে এই মামলার বাদী এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা হত্যাচেষ্টার শিকার জাকির হোসেনকেও হাজির হতে বলা হয়েছে।