১লা ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
যবিপ্রবি
যবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতন : অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়নি
161 বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের কক্ষে চার ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়ে যাচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খান মাইদুল ইসলাম জানান, ‘মামলার এজাহারভুক্ত দুইজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তারা তাদের অবস্থান দ্রুত পরিবর্তন করছে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারবো।’

এদিকে নির্যাতনের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন তিনদিনেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। নির্যাতিত ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে ফিরেছি। তবে সুস্থ হতে পারিনি। পুরোপুরি শয্যাশায়ী অবস্থায় আছি। মাথা ও পিঠে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। ক্লাস চললেও আমি ক্লাসে ফিরতে পারছি না। অথচ নির্যাতনকারীদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হলো না। এটা ভেবেই আরো কষ্ট পাচ্ছি। অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

গত রোববার দুপুরে ইসমাইল হোসেনকে তার বিভাগ থেকে ডেকে আবাসিক হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে চার ঘন্টা ধরে ছাত্রলীগের দুই কর্মী শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান নির্যাতন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অচেতন অবস্থায় ইসমাইককে উদ্ধার করে রাত ১০টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় পরদিন সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জাহিদ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলীকে আসামি করা হয়েছে। যদিও মামলা দায়েরের আগেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ও শোয়েব এনএফটি বিভাগের ইসমাইল হোসেনের কাছে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ইসমাইলকে বিভাগ থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের পঞ্চম তলার ৫২৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে পূর্বের দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দিতে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইসমাইলকে চার ঘন্টা কক্ষের ভিতরে আটকে রেখে বেল্ট, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট ও জখম করে।

শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার ইসমাইল হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর বিচার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের কপি দিয়ে উপাচার্য থানায় নিয়মিত মামলা করার জন্যে প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।’
তবে মামলা দায়েরের আগে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোয়েব আলী দাবি করেন, ইসমাইল তাদের বন্ধু। তাকে তারা মারপিট করেননি। একটি ঘটনা জানার জন্য ইসমাইল তাদের সাথে তাদের রুমে আসে। কিন্তু ওই ঘটনায় জড়িত বড়ভাইয়ের এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ওই তিন বড়ভাই তাদের রুমে এসে ইসমাইলকে মারপিট করেছে। অথচ ঘটনাটি ঘুরিয়ে দিয়ে তাদেরকেই (সোয়েব ও সালমান) দোষী করা হয়েছে।

প্রত্যদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে বিভাগে পাঠদান চলাকালে শোয়েব ও সালমান তাঁকে ডেকে হলের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram