নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের কক্ষে চার ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জাহিদ সোমবার রাতে যশোর কোতোয়ালি থানায় এই মামলা করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলীকে আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামে। রোববার শহীদ মসিয়ূর রহমান আবাসিক হলের ৫২৮ নম্বরকে তাকে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ওই কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় সহপাঠীরা ইসমাইলকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ও শোয়েব পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের ইসমাইল হোসেনের কাছে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ইসমাইলকে বিভাগ থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের পঞ্চম তলার ৫২৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে পূর্বের দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দিতে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইসমাইলকে চার ঘন্টা কক্ষের ভিতরে আটকে রেখে বেল্ট, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট ও জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে হল থেকে অভিযুক্ত দু’জনকে বহিস্কার করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার ইসমাইল হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর বিচার দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের কপি দিয়ে উপাচার্য থানায় নিয়মিত মামলা করার জন্যে প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত শোয়েব ও সালমান ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
তবে মামলা দায়েরের আগে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোয়েব আলী দাবি করেন, ইসমাইল তাদের বন্ধু। তাকে তারা মারপিট করেননি। একটি ঘটনা জানার জন্য ইসমাইল তাদের সাথে তাদের রুমে আসে। কিন্তু ওই ঘটনায় জড়িত বড়ভাইয়ের এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ওই তিন বড়ভাই তাদের রুমে এসে ইসমাইলকে মারপিট করেছে। অথচ ঘটনাটি ঘুরিয়ে দিয়ে তাদেরকেই (সোয়েব ও সালমান) দোষী করা হয়েছে।
সোয়েব আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো বক্তব্য বা জবাবদিহিতা না নিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা অবিচারের শিকার হয়েছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে বিভাগে পাঠদান চলাকালে শোয়েব ও সালমান তাকে ডেকে হলের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, হলের প্রভোস্ট বডি ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল থেকে জড়িত দুই ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।