১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যবিপ্রবি : কোটি টাকার অডিট আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) কর্মরতদের সরকারি বাড়িভাড়া ভাতা গ্রহণ নিয়ে প্রায় কোটি টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে বসবাস করেও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সরকারি বাড়িভাড়ার পুরোটাই তুলে নিচ্ছেন। এরপর নামমাত্র বাড়িভাড়া পরিশোধ করছেন।

এর মধ্যে উপাচার্যও রয়েছেন। এ নিয়ে ইউজিসি একাধিক বার আপত্তি জানালেও কানে তুলছে না যবিপ্রবি কতৃর্পক্ষ।

যবিপ্রবি সূত্র জানায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ৭৩টি ফ্ল্যাট ও বাসা রয়েছে। এছাড়া উপাচার্যের জন্য রয়েছে এয়ারমার্ক বাংলো। এই ৭৩টি ফ্ল্যাট ও বাসা’র মধ্যে ৬৭টিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বসবাস করছেন।

সরকারি বাসভবনে বসবাস করলেও তারা সরকারপ্রদত্ত বাড়িভাড়া ভাতার পুরোটাই উত্তোলন করে নিচ্ছেন। আর সরকারি ভবনে বসবাসের ভাড়াবাবদ দেড় থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করছেন।

অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী, ‘প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী সরকারি বাসস্থানে বসবাস করিতেছেন তাহার বাড়ি ভাড়াভাতা প্রাপ্য হইবেন না।’
কিন্তু বাসাভাড়া নিয়ে যবিপ্রবি’র সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বরের’২৩ অফিস আদেশেও বিধি লংঘনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে।

এই অফিস আদেশে তিনকক্ষের ফ্ল্যাটের ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা, দুই কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা, এক কক্ষের জন্য দেড় থেকে দু’হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভবিষ্যতে বাসাভাড়া বিষয়ে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হলে সে অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধে বাধ্য থাকিবেন।’

এদিকে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়েই আপত্তি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)। যবিপ্রবি নিয়ে ইউজিসি’র ২০২২—২৩ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে বাড়িভাড়া প্রসঙ্গে আপত্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে বিধিবহিভূর্তভাবে পূর্ণ বাড়ি ভাড়া প্রদান করে একটি নির্দিষ্ট হারে বাড়ি ভাড়া কর্তন করায় আর্থিক বিধির লংঘন ও ক্ষতির পরিমাণ ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।’

আর ইউজিসি পরিদর্শক দলের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৬ এর উপ—অনুচ্ছেদ (২) অনুসরণপূর্বক আবাসনে বসবাসরতদের বাড়ি ভাড়াভাতা প্রদান বন্ধ করে ইতোপূর্বে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থ সুবিধাভোগীদের নিকট হতে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

একইসাথে প্রতিবেদনে আরেক আপত্তিতে বলা হয়েছে, ‘উপাচার্য মহোদয়ের এয়ারমার্ক বাংলো থাকা সত্ত্বেও ঢাকাস্থ বাসার ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল হতে পরিশোধ করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।’ এক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এয়ারমার্ক করা বাংলো থাকলে ব্যক্তি ব্যবহার করুক বা না করুক, এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মহোদয়কে ঢাকাস্থ বাসার ভাড়া বাবদ প্রদত্ত আর্থিক সুবিধা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

রিপোর্ট অনুযায়ী, আবাসিক ভবনে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে বিধিবহিভূর্তভাবে পূর্ণ বাড়ি ভাড়া প্রদান এবং উপাচার্যের ঢাকার বাড়ি ভাড়া প্রদান করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

এছাড়া আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থানের জন্য আবাসিক ভবনে বসবাস করার বিধান থাকলেও তিনি সেখানে অবস্থান না করে বাসাভাড়া ভাতা উত্তোলন করেন।

আবাসিক ভবনে বসবাসরতদের পূর্ণ বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে যবিপ্রবি’র পরিচালক (হিসাব) মো. জাকির হোসেন বলেন, রেজিস্ট্রার দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদান করা হয়। এ জন্য তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব আবাসিক ভবনে বসবাসরতদের পূর্ণ বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান এবং তার ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘বক্তব্য দেওয়ার জন্য তিনি অথরাইজড্ পারসন না।’

তবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউজিসি অনেক বিষয় নিয়ে অডিট আপত্তি দেয়। সেগুলোর যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়। আর রাজধানী ঢাকার বাইরের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ি ভাড়াভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

আর রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। যদিও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram