নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অর্গানোগ্রাম (টিওঅ্যান্ডই) অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক কর্মকর্তা—কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অর্থবাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। ‘পছন্দের প্রার্থী’কে নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও করা হচ্ছে অনিয়ম ।
অভিযোগকারীদের দাবি, যবিপ্রবি’র প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশসহ ফেরত পাঠালেও তা সংশোধন না করেই অনুমোদিত বলে প্রচার করছেন কতৃর্পক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম ২০১৯—২০ অর্থবছরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এরপর যবিপ্রবি কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) নতুন প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের জন্য জমা দেন। ইউজিসি প্রস্তাবিত পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে প্রেরণ করে।
এরপর প্রস্তাবিত সংশোধিত অর্গানোগ্রামটি যবিপ্রবি উপাচার্য বরাবর ফেরত পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ—সচিব মোছা: রোখছানা বেগমের স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত সংশোধিত অর্গানোগ্রামটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ৪(জ) ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে এসাথে ফেরত প্রদান করা হলো।’
সূত্র জানিয়েছে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ৪(জ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে এবং সরকার কতৃর্ক বাজেট বরাদ্দ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও সুপারনিউমারারী অধ্যাপক ও এমেরিটাস অধ্যাপক পদে এবং প্রয়োজনীয় অন্যকোনো গবেষণা ও শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা এবং সংশ্লিষ্ট বাছাই বোর্ড কতৃর্ক সুপারিশকৃত ব্যক্তিগণকে সেই সকল পদে নিয়োগ প্রদান করা।’
সূত্রের দাবি, এই ধারায় শিক্ষক—গবেষকদের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ফলে অর্গানোগ্রাম অনুমোদন ছাড়া কর্মকর্তা—কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নেই। কিন্তু যবিপ্রবি একের পর এক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করে চলেছে।
সূত্র অনুযায়ী, গত ২২ আগস্ট’২৩ যবিপ্রবিতে ‘ল অফিসার’ হিসেবে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও যোগদানপত্র অনুযায়ী তাকে সহকারী রেজিস্ট্রার (লিগ্যাল) পদের বিপরীতে অস্থায়ী নিয়োগ দেখানো হয়েছে। এর আগে যবিপ্রবি’র ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘নজিরবিহীনভাবে’ উচ্চমাধ্যমিকের যোগ্যতাকে শিথিল করা হয়েছে।
<< আরও পড়ুন >> যবিপ্রবি : নিয়োগ বাণিজ্য—অনিয়ম নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিকে নূন্যতম ‘এ’ গ্রেড বা প্রথম বিভাগ থাকার কথা। সেখানে আন্তর্জাতিক ট্রেনিংকে যোগ্যতা গণ্য করে উচ্চমাধ্যমিকে ছাড় দেয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করা হয়নি; বরং মনোনীত প্রার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া লিফটের জন্য ১৪টি লিফট অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে যে ১৪টি লিফটের কথা বলা হয়েছে তার ৬টি এখনও স্থাপনই করা হয়নি। তারামান বিবি হল ও মুন্সী মেহেরুল্লাহ হল চালু না হলেও সেকশন অফিসার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত এই দুই কর্মকর্তা’র একজন যবিপ্রবি’র এক শীর্ষ কর্মকর্তার ভাইপো, অন্যজন ছাত্র নেতা।
সূত্র আরও জানিয়েছে, যবিপ্রবিতে এর আগেও একাধিক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ও অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে নিয়োগের মাধ্যমে ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২১ আগস্ট যবিপ্রবি’র প্রাক্তন উপাচার্য, যবিপ্রবির পূর্ত দপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আব্দুর রউফসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যশোর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অধীনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেছে দুদক।
২০১৮ সালে পিএ পদে মনজুরুর রহমান নামে একজনকে রিজেন্ট বোর্ড চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই তাকে যোগদান করতে না দিয়ে পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মনজুরুর উচ্চ আদালতে মামলা করলে বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো বক্তব্য দেবেন না।
আর যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, অর্গানোগ্রামে সব পদের ব্যাপারে উল্লেখ থাকেনা। রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তিনি যোগদান করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে।
এ কারণে শহরের রাজনীতিকরা সবসময় পেছনে লেগে থাকেন, কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অঘটন ঘটাবেন। তারাই এ ধরণের অভিযোগ—অপপ্রচার করছেন। আর পূর্বের নিয়োগের ব্যাপারে প্রাক্তন ভিসি বলতে পারবেন।