নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ‘অনিয়মের’ মাধ্যমে আনা সেই ১৪টি লিফট স্থাপন শুরু হয়েছে। দরপত্রের ‘স্পেসিফিকেশন’ পরিবর্তনের পরও কতৃর্পক্ষ এই লিফট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।
যবিপ্রবি’র আলোচিত এই ‘লিফটকাণ্ড’ নিয়ে ইতোপূর্বে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় কর্মকর্তারা গত পাঁচমাস ধরে নিরব ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, এর মাধ্যমে নয় কোটি ৩৭ লাখ টাকার এই উন্নয়ন কাজে প্রায় চার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে বক্তব্যের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লুকোচুরি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চারটি ভবনের (টিএসসি, দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন, মুন্সী মেহেরুল্লাহ ও তারামন বিবি হল) জন্য ১৪টি লিফট স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম দরপত্রে হরিজন টেকনো লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়।
কিন্তু তাদেরকে কার্যাদেশ না দিয়ে রি—টেন্ডার আহ্বান করে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর। রি—টেন্ডারের পর গতবছর এপ্রিলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয় প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে।
গত মে মাসে প্রায় নয় কোটি ৩৭ লাখ টাকার ১৪টি লিফটের মালামাল সরবরাহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
<< আরও পড়ুন >> যবিপ্রবি : কোটি টাকার অডিট আপত্তি
তখন অভিযোগ ওঠে, দরপত্রের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে ১৪টি লিফটের এই মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ‘মেশিনরুম টাইপ’এর পরিবর্তে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ এবং ‘ডোর সাইজ’ ও ‘মোটর পাওয়ার’ কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দরপত্র অনুযায়ী প্রতিটি লিফটের মূল্য হওয়ার কথা প্রায় ৬৭ লাখ টাকা। কিন্তু স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে অর্ধেকেরও কম দামের লিফট সরবরাহ করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সে সময় সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এরপর গত ১ জুন সংশ্লিষ্ট কাজ বুঝে নেওয়া কমিটির সভায়ও ‘মেশিনরুম টাইপ’র পরিবর্তে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ এবং ‘ডোর সাইজ’ ও ‘মোটরপাওয়ার’ দরপত্র অনুযায়ী কম মানের সরবরাহ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই তিনটি ক্যাটাগরিতেই ১৪টি লিফট ‘নন কমপ্লাই’ বলে সভার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
<< আরও পড়ুন >>যবিপ্রবি : অর্গানোগ্রাম অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ, হচ্ছে স্বজনপ্রীতি ও অর্থবাণিজ্য
যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, লিফট বুঝে নেয়া কমিটির ওই প্রতিবেদনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লিফট পরিবর্তন করতে না বলে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর ই—জিপি’র স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে কমিটিকে চিঠি দিয়ে মালামাল বুঝে নেয়ার জন্য চাপ দেয়।
অর্থাৎ দরপত্রের স্পেসিফিকেশন লঙ্ঘন করে যে লিফট আনা হয়েছে, সেই স্পেসিফিকেশন দিয়ে লিফট বুঝে নিতে বলা হয়। এক্ষেত্রে ওই স্পেসিফিকেশন ‘হেড অব প্রোকিউয়রমেন্ট এনটিটি’ (এইচওপিই) কতৃর্ক অনুমোদিত বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর লিফট বুঝে নেওয়া কমিটি তাদের সর্বশেষ সভায় পরিবর্তিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে দরপত্রের স্পেসিফিকেশন লঙ্ঘন করা লিফট স্থাপন শুরু হয়েছে।
লিফট বুঝে নেওয়া কমিটির সদস্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন সর্বশেষ ওই সভায় আসেননি। তিনি বলেন, দরপত্র অনুযায়ী লিফটের মালামাল সরবরাহ করা হয়নি।
এখানে ‘মিসম্যাচ’ হয়েছে। এরপর মালামাল বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি। এ কারণে তিনি সর্বশেষ সভায় যাননি।
<< আরও পড়ুন >> যবিপ্রবি : নিয়োগ বাণিজ্য—অনিয়ম নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
প্রথম প্রতিবেদনে ‘নন কমপ্লাই’ উল্লেখ করা লিফট কিভাবে স্থাপন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে লিফট বুঝে নেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির আহ্বায়ক কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গালিব বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ দিতে পারবে।
আর লিফট স্থাপনের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পূর্ত বিভাগের পরিচালক পরিতোষ কুমার বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে এই দপ্তরের উপ—পরিচালক আব্দুর রউফ কোনো ধরণের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, লিফট স্থাপন হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে।
<< আরও পড়ুন >> যবিপ্রবি : ‘লিফটকাণ্ডে’ অনিয়মের সত্যতা মিলেছে
তিনি দাবি করেন, লিফট স্থাপন শুরু হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে একাধিক কমিটি আছে, তারা বিষয়টি দেখাশুনা করে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওই কমিটিগুলো এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। তারা সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে নিলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হবে।