লাবুয়াল হক রিপন : কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের পর সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য উন্মোচন হয়নি যশোরের ঘোড়াগাছার মোজাহার মেটাল ওয়ার্কসপ কর্মি মোফাজ্জেল হোসেন মোফা হত্যাকাণ্ডের। ঘটনার ১০ মাস পরেও হত্যার কারণ উদঘাটন না হওয়া এবং অভিযুক্তদের আটক না করায় হতাশ হয়ে পড়ছে নিহতের পরিবার।
তবে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হত্যার কারণ নির্ণয় এবং এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) পরিদর্শক হিরন্ময় সরকার।
যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের গোপালপুর আদর্শ গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মোফাজ্জেল হোসেন মোফা এলাকার ঘোড়াগাছা গ্রামের মেসার্স মোজাহার মেটাল ওয়ার্কসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গোপালপুর আদর্শ গ্রামের হাসান শ্রমিক সরদার, সোহেল সুপারভাইজার, মিনহাজ, মেহেদী ও মিজান শ্রমিক এবং খালিদ হোসেন ম্যানেজার পদে কাজ করেন।
মোফাজ্জেল হোসেন ওই কারখানায় কাজ করলেও দীর্ঘদিন ধরে অপর শ্রমিক মিনহাজ তার বিরুদ্ধে বিরুপ আচারণ শুরু করে। এমনকি মোফাজ্জেলকে হত্যার হুমকি দেয়। সে কারণে মোফাজ্জেল হোসেন দুই মাস ওই কারখানায় কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে মিনহাজকে বরখাস্ত ও শ্রমিক সরদার হাসান এবং সুপারভাইজার সোহেল বেতন বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় মোফাজ্জেল আবারও ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট মোজাহার মেটালে ফিরে আসেন।
মাত্র চারদিন পরে ১ সেপ্টেম্বর কাজ করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে যান। ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে সুপারভাইজার সোহেল মোবাইল ফোনে রুবেল হোসেনকে জানায় তোমার ছোট ভাই মোফাজ্জেল হোসেন মোফা মারা গেছে। সাথে সাথে মোফার পিতা আব্দুল জলিল কারখানায় গিয়ে না পেয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়।
কিন্তু হাসপাতালে মোফার লাশের ছবি তুলতে গেলে ম্যানেজার খালিদ, সুপারভাইজার সোহেল ও শ্রমিক সরদার হাসানসহ সকলেই রুবেলকে বাধা দেয়। ওই সময় মোজাহার মেটালের মালিককে সকলেই বলে মোফা বৈদ্যুতিক ষ্পষ্টে মারা গেছে। লাশটি যেন ময়না তদন্ত না হয়। পরে কারখানা মালিকের সহায়তায় ময়না তদন্ত ছাড়া লাশটি বাড়িতে আনার পরই তার পিতা ছেলের শোকে আব্দুল জলিল অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
আর এই সুযোগে হাসান, সোহেল, মিনহাজ, মেহেদী, মিজানও খালিদ লাশটি দাফন করে দেয়। ২৮ অক্টোবর কিছুটা সুস্থ হয়ে জানতে পারেন যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাত ২টার দিকে ভারী কোন অস্ত্র দিয়ে মোফাকে আঘাতে হত্যা করে। পরে তার ডান পাজরে বিশেষ কোন কায়দায় পুড়িয়ে বিদ্যুত ষ্পৃষ্টে মারা গেছে বলে প্রচার করে। তবে মোফার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে তার বড় ভাই রুবেল গোপনে মোবাইলে ধারণ করা দুইটি ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে।
ফলে এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজনদের সাথে আলোচনা করে থানায় মামলা করতে যান আব্দুল জলিল। কিন্তু থানা মামলা না মেয়ায় তিনি আদালতে ওই ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেয় আদালত।
পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক হিরন্ময় সরকার চলতি বছরের ২৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশটি উত্তোলন করেন। পরে লাশের রাসায়নিক পরীক্ষা করার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজশাহীতে পাঠিয়েছে।
কিন্তু এই হত্যাকান্ডের দশ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা এই হত্যাকান্ডের কারণ নির্ণয় এবং খুনিদের আটক করতেও পারেননি। দীর্ঘ দশ মাসেও কারণ নির্ণয় ও খুনিদের আটক করতে না পারায় মোফা হত্যা মামলার ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে ধারণা করেছেন তার বড় ভাই রুবেল হোসেন।
তবে তদন্ত কর্মকর্তা হিরন্ময় সরকার বলেছেন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরে এই হত্যার কারণ নির্ণয়ের পরে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।