মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ যেন সবুজের মাঝে হলুদ ফুলের সমারোহ। হলুদে হলুদে মোড়ানো সরিষা ফুলে ছেয়ে আছে মেহেরপুরের মাঠ। প্রকৃতি সেজেছে যেন আপন মহিমায়। মৌ-মৌ গন্ধে সরব হয়ে মৌমাছিরা। মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ সরিষা ক্ষেত বলে দিচ্ছে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। কৃষকের চোখে আনন্দের ঝিলিক। চলতি বছরে মেহেরপুরে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। আর সরিষার খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সময় এবং খরচ কম হওয়ায় জেলায় সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে ও সরিষা চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭-৮ মণ সরিষা উৎপাদন হবে। লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুক‚ল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে মেহেরপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বেশী হয়েছে। চলতি রবি শস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবং সরিষাক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার শোলমারি গ্রামের সরিষাচাষী নিয়ামত আলী জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করা যায় দুই হাজার ৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘাতে সাতমণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া মাত্র তিনমাস সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রæ জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমন না থাকায় সরিষার ফলন ভাল হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গাংনী সদর উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের সরিষা চাষী আবুল বাশার বলেন. নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাত ফলন বেশি। অনেক কৃষক আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করেছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে সরিষা এবং ভোজ্য তেলের দাম বেশি। রবিশস্য চাষের এবার অনুক‚ল পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ পেলে মানুষ আবার সরিষা আবাদে ফিরে আসবে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুক‚লে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও তিনি আশাবাদী।