ম. সোমেল রানা, মেহেরপুর
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী মাঠে ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভুট্টা চাষিরা। কীটনাশক প্রয়োগ করেও এই পোকার আক্রমন থেকে ভুট্টা রক্ষা করতে পারছে না কৃষক। রাতের আঁধারে এই পোকা খেয়ে ফেলছে গাছের কচি কান্ড আর পাতা। গাছের নরম পাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলায় ভুট্টার গাছ মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়ছে। কৃষি বিভাগও চিন্তিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ প্রয়োগে প্রতিরোধ না হওয়াতে। সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা হয়। ভুট্টা চাষীরা এই পোকাকার আক্রমনকে পঙ্গপালের সাথে তুলনা করছেন। অতিদ্রæত প্রতিরোধ না হলে একদিকে যেমন ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হবে না। অপরদিকে কৃষকরা ভুট্টাচাষে আগ্রহ হারাবে।
কৃষিবিদদের মতে ‘এই পোকাটি আমেরিকা মহাদেশে প্রথম শনাক্ত হয়। পোকাটি দ্রæত অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে এটির প্রথম আক্রমণ হয় আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এই পোকার সংক্রমণ শুরু হলে রাতারাতি ফসলের ক্ষেত পুরোটারই ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া আর যে ধরনের ফসল এখানে চাষ হয়, তাতে এই দেশটি ভয়ঙ্কর এই পোকার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে’। দিনের বেলা পোকাটি লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে খাবারের সন্ধানে বের হয়ে সাবাড় করে দেয় গাছের ডগা, কচি পাতা।
গাংনী উপজেলার ভুট্টা চাষি ফজলুর রহমান বলেন, তিন বিঘা আগাম জাতের ভুট্টার আবাদ করেছি। পরিচর্যা করে ভুট্টার গাছ প্রায় সাড়ে তিন ফুট লম্বা হয়েছে। এখন প্রতিটি গাছে মোচা আসার সময়। হঠাৎ দেখি গাছের পাতা ছিদ্র করে খেয়ে ফেলছে। অনেক গাছের কান্ড খাওয়া শূরু করেছে। এ দেখে কীটনাশক স্প্রে করেও ঠেকানো যাচ্ছে না এ পোকার আক্রমণ। পরে দিনের বেলায় গাছে গাছে পোকা দেখার চেষ্টা করেও পোকার দেখা মেলেনা। শুনছি নাকি এ পোকা রাতে খাওয়া শুরু করে এবং সকাল হলেই গাছ থেকে নেমে যায়।
কৃষক সাজাহান আলী বলেছেন, আগে তামাকের আবাদ করতাম। তামাকের আবাদ ছেড়ে ভুট্টার আবাদ শুরু করেছি। গেল বছর ভুট্টার আবাদ করেছিলাম। যেমন ফলন পেয়েছিলাম তেমনী ভাল দাম পেয়েছিলাম। এবছর আবারও ভুট্টার আবাদ করেছি। গত কয়েকদিন ধরে আমার জমির আবাদকৃত ভুট্টা গাছের কান্ড ও পাতা খেয়ে তছরুপাত করছে পোকা। আমি পোকার নামও জানতাম না। তবে কৃষি অফিসে গিয়েছিলাম তারা বলেছেন এটি ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা। এ পোকার আক্রমন থেকে রেহায় পাওয়া খুবই কঠিন। তবে এসএনসি পিভি, ফলিজন ও ক্লোরানট্রিনিলিপনি গ্রæপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। আমি তাই করছি। দেখা যাক কি ফলাফল পাওয়া যায়।
কৃষক আইয়ুব আলী জানান, পোকাটি দিনে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতের আধারে এর আক্রমণ শুরু। সারা রাত ধরে ভুট্টা গাছের পাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলছে।
গত বছর ভুট্ট্রার ভাল ফলন পাওয়ায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় গেল বছরের তুলনায় ভুট্টার আবাদা বেড়েছে দ্বিগুন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। এতে ৭৮ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর ভুট্টার আবাদ হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর। উৎপাদন লক্ষামাত্র ধরা হয়েছে ১ লাখ মেট্রিক টন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লাভলী খাতুন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই পোকাটার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। মেহেরপুরের কাছাকাছি ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন ফসলে এ পোকার বসবাস। তবে পোকাটি খাবার গ্রহন করে রাতে। যে কারনে কীটনাশক ব্যবহার করেও দ্রত ফলাফল বয়ে আনা কঠিন। তিনি আরও বলেন, ফল আর্মিওয়ার্ম শুধু ভুট্টা গাছই নয়, ২৭০ প্রকার গাছের পাতা ও কান্ড এই পোকার খাবার। তবে সব চেয়ে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ভুট্টা গাছের পাতা ও কচি কান্ড। আমাদের পরামর্শ চাষিদের কাছে অব্যাহত রেখেছি।