১৯শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মেহেরপুরে ক্যাপসিকাম চাষের সম্ভাবনা
মেহেরপুরে ক্যাপসিকাম চাষের সম্ভাবনা


সোমেল রানা, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুরে ‘ক্যাপসিকাম’ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কৃষিকাজে জড়িত শিড়্গতি অনেক যুবকও উঠে পড়ে লেগেছেন ক্যাপসিকাম চাষে। বছর তিনেক আগে মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলায় কয়েকজন শখের বশে বাড়ির আঙিনায় ক্যাপসিকাম চাষ করেন। ক্যাপসিকামের পর্যাপ্ত ফলন আসে। আশপাশের লোকজন উদ্বুদ্ধ হয় এই চাষে। ক্যাপসিকাম সবজি এবং স্যুপ রান্নায় বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। এটি সালাদ হিসেবেও ব্যবহার করা হয় শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট।

মেহেরপুরের প্রেক্ষাপটে নতুন এই সুস্বাদু খাবার খেতে বেশ পছন্দ করছেন ফাস্টফুড প্রেমিরা। এরপর থেকে জেলায় চাষটি জোরদার হয়। সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের চাষ করছেন দুই সহোদর হাসান শাহরিয়ার লিয়ন ও শাহনেওয়াজ সোহান। তিন বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তারা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে ‘গম’ চাষে দেশের সেরা চাষির খেতাব অর্জন করেছিলেন রাধাকাšত্মপুর গ্রামের দুই চাষী ছাবদার আলী ও আব্দুল আজীজ। তাদের সেই অর্জনের পরে ওই সময়ের কৃষিমন্ত্রী রাধাকাšত্মপুর গ্রাম সফর করেন এবং উন্নত চাষের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ এবং গভীর পাম্প মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন। এই ছাবদার আলী ও আব্দুল আজীজের ছোটভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মাস্টারের তিন সন্তান শাহরিয়ার লিওন, শাহনেওয়াজ সোহান ও ইউরোপের দেশ চেক রিপাবলিকের জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম প্রধান ক্রিকেটার- শাহ্ ফরহাদ সোহাস। সময়ের প্রয়োজনেই ক্যাপসিক্যামের চাষ শুরু করেছেন তারা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা হাসান শাহারিয়ার লিওন জানান, এবছর প্রাথমিকভাবে ১ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ শুরম্ন করেন। মূলত: ক্রমাগত মানুষ বাড়ার কারণে সবজির চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আমরা এই চাষে হাত দিয়েছি। তাদের ছোটভাই সোহাস- চেক রিপাবলিক থেকেই অনলাইনে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের পাশাপাশি এই ক্যাপসিক্যাম চাষের পদ্ধতি থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে তদারকি করছে।


ক্যাপসিক্যাম চাষ উদ্যোক্তা শাহনেওয়াজ সোহান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে ‘ফার্মেসি’তে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাষাবাদের জন্য গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি নিজে ও গ্রামের যুব সমাজের জন্য কিছু করার লক্ষে ‘ইনাট মার্ট’ নামে একটি অনলাইন সাইটে কৃষিপণ্য বাজারজাত শুরু করেন।

সেখানে সফলতা পেয়ে ‘মাথাল’ নামের একটি কৃষি প্রজেক্ট চালু এবং ‘খোয়াড়’ নামে পশুপালন প্রকল্প হাতে নেন। মাথাল-এর আওতায় এবার প্রথমবারের মতো ১ একর জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করেন। দেশে ও বিদেশে এই সবজির ব্যাপক চাহিদা ও বাজারে ভালো দাম থাকায় নতুন এই ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হন তারা। নিজেরা কৃষিবিদ ও পুষ্টিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেনে-বুঝে এবং মাটি পরীক্ষা থেকে যাবতীয় কাজ করে এই চাষ শুরম্ন করেন।


ক্যাপসিকাম এক ধরনের মিষ্টি মরিচ। চারা রোপনের দু‘মাস পর থেকে ফুল ধরতে শুরম্ন করে। একটি গাছে ৫/৬টি ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ক্যাপসিক্যামে বেশকিছু (যেমন- জাবপোকা, থ্রিপস পোকা, লালমাকড়) পোকামাকড় আক্রমণ ও রোগের (যেমন- এ্যানথ্রাকনোজ ও বাইট রোগ ইত্যাদি) পাদুর্ভাব হয়। এসব রোগের আক্রমণ হলে কৃষিবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়।


পুষ্টিমানের দিক থেকে অত্যšত্ম মূল্যবান সবজি ক্যাপসিকাম- মানব শরীরের সবজিসহ বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বেশকিছু অসুখ উপশমে বেশ কার্যকরি। কেননা, মাইগ্রেনের ওষুধ বলা হয় ক্যাপসিকামকে। লাল কিংবা সবুজ, যেকোনও ক্যাপসিকামই শরীরে এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।


স্থানীয় বাজারে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। ৩ বিঘা জমিতে ২৪শ’ গাছ থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ১শ’ কেজি করে ক্যাপসিকাম সংগ্রহ হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় সবুজ ও নীল রঙের ক্যাপসিক্যাম মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে।


পার্শ্ববর্তী রাজাপুর গ্রামের কৃষক নুরম্নজ্জামান আগামী বছর চাষ করবেন বলে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, নতুন এই ফসলটি এলাকায় কৃষিতে নতুন এক মাত্রা পেল। মরিচের মত দেখতে কিন্তু মোটা আর বিভিন্ন রঙের। দেখতে খুব ভালো লাগে। খেতেও সুস্বাদু।

তিনি আগামীতে চাষ করবেন বলে মাঝে মাঝেই দেখতে আসেন। ক্যাপসিক্যাম চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, নতুন একটি ফল চাষ হয়েছে শুনে এখানে এসেছি। এ ফল আগে আমরা কোনোদিন দেখিনি। বিদেশি এ ফল আমাদের মেহেরপুরে চাষ হচ্ছে দেখে খুবই ভালো লাগছে।


সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভীন জানান, উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরম্ন হয়েছে। ক্যাপসিকামে ভিটামিন এ, বি, সি,ই ও কে প্রচুর পরিমানে রয়েছে। তবে চাষটি করতে ছত্রাক ও মাইটের আক্রমন বেশি। এড়্গত্রে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।


মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, যদিও গরমের তিব্রতা পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে ক্যাপসিকামের ফলন কম হচ্ছে। তারপরও ক্যাপসিকাম চাষে মেহেরপুরের অর্থনীতিতে অবদান রাখার সম্ভাবনা আছে। আমদানি ক্যাপসিকামের তুলনায় আমাদের উৎপাদিত ক্যাপসিকামের গুণগত মান অনেক ভালো।

ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম চাষ বাড়াতে পরামর্শ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram