সোমেল রানা, মেহেরপুর : ফল ও গাছের কোন অংশই ফেলনা নয়। এমন একটি গাছের নাম কাঁঠাল গাছ। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল রসালো ও সুস্বাদু একটি ফল। এবারও চলতি মৌসুমে জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন বাগান মালিকদের মুখের হাসি চওড়া করেছে। বাজারে পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু হয়েছে। দামও মানুষের চাহিদার মধ্যে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, মেহেরপুর জেলার ৩টি উপজেলায় ৮১৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ আছে। এ বছর কাঁঠালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার মন। মেহেরপুরে আমের পরেই কাঁঠালের স্থান। সব জনগোষ্ঠির মধ্যে কাঁঠালের চাহিদা ব্যাপক। পাকা কাঁঠালের চেয়ে সবজি হিসেবে কাঁঠালের চাহিদা মেহেরপুর জেলার সর্বস্তরের সর্বগোত্রের মধ্যে সমান জনপ্রিয়। পরিপূর্ণ বয়সের কাঁঠালকাঠ অন্যান্য কাঠের চেয়ে বেশী দামে বিক্রি হয়ে থাকে। কাঁঠালপাতা ছাগলের প্রিয় খাদ্য হওয়াতে অনেকে কাঁঠালগাছ রোপন করে পাতা বিক্রির জন্য।
মেহেরপুর জেলার নির্ধারিত বাগান ছাড়াও সড়ক-মহাসড়ক, গ্রামীণ জনপদ, হাট-বাজার এবং বাড়ির আঙ্গিণায়ও কাঁঠালগাছ বেড়ে ওঠে, ফল দেয়। ব্যক্তি মালিকানায় কাঁঠালগাছ রোপণ করা হয়। রাস্তার পাশ দিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই কাঁঠাল গাছ রোপন করে থাকেন। কোনো ধরনের সার, কীটনাশক এমনকি বিশেষ পরিচর্যা ছাড়াই এ গাছ আপনগতিতে বেড়ে ওঠে।
জেলার প্রতিটি উপজেলার গাছগুলোতে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। উৎপাদিত কাঁঠাল জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। কাঁঠালের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এর কোনো অংশই ফেলে দিতে হয় না। কাঁঠালের রস থেকে প্রচুর ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কাঁঠালের বিচি এবং কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালের খোলস ও পাতা গবাদিপশুর অত্যন্ত প্রিয় খাবার। তাই কাঁঠাল গাছ লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। সরেজমিনে মেহেরপুর জেলা শহরের কাথুলী সড়কে জিল্লুর রহমানের কাঁঠাল বাগানে একটি গাছে গাছের মগডাল থেকে শুরু করে গাছের গোড়া পর্যন্ত কাঁঠালে ভরপুর দেখা যায়।
কাঁঠাল একটি যৌগিক ফল। বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এ বিষয়ে জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেছেন, জেলায় এ বছর কাঁঠালের ফলন খুবই ভাল হয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় কাঁঠাল গাছ লাগানো হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে রাস্তার দু‘ধারে কাঁঠালগাছ রোপন করা হচ্ছে প্রতিবছরই। উৎপাদন বৃদ্ধিতে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সারা বছর যাতে কাঁঠাল উৎপাদন করা যায় এ জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।