শাহ জামাল শিশির, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছায় লাউজানি রেলক্রসিং সংলগ্ন রোড ডিভাইডার যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই ডিভাইডার কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে রাতে চলাচল করা ট্রাক চালকরা এই ডিভাইডারের কারণে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন। সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে এই ডিভাইডার। গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও ডিভাইডার অপসারণ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কোনোরকম উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি গত বছরের ডিসেম্বরে ৭টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে দুটিসহ মোট ৯টি ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দিনগত রাত তিনটার দিকে বেনাপোলগামী মুরগীর বিষ্টা বোঝাই একটি ট্রাক ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। প্রাণহানি না ঘটলেও ট্রাকটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ট্রাকটি উল্টে রা¯ত্মায় পড়ে থাকায় জানজট সৃষ্টি হয়। পরে হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে দিনে রাতে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহীসহ ভারি যানবাহন চলাচল করে। ২০১৭-১৮ সালে এই মহাসড়ক পুনঃনির্মাণের সময় দীর্ঘ ৩৪ কিলোমিটার রা¯ত্মার জায়গার ভিত্তিতে প্রশ¯ত্মতা বাড়ানো হয় ২৪ ফুট থেকে ৩৪ ফুট পর্যšত্ম। এবং রা¯ত্মার দুই পাশে ৫ ফুট করে সোল্ডার নির্মাণ করা হয়। আর এই মাপের ওপরেই ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি রেলক্রসিংয়ে প্রায় ১ ফুট প্রশস্থ ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ডিভাইডার স্থাপন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রাšত্ম থেকে ভারি পণ্যবাহী যানবাহনে করে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আনা- নেওয়া করা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটে এ ডিভাইডারকে স্পষ্টভাবে বোঝাও যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত এই ডিভাইডারকে ধাক্কা দিয়ে অনেক যানবহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার খবর সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে গেলেও তারা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়নি।
বেনাপোলের ট্রাকচালক আব্দুর রহিম বলেন, রাতে ট্রাক চালানোর সময় ডিভাইডার দেখা যায়না। ডিভাইডারের কারণে রা¯ত্মাও সরম্ন হয়ে গেছে। এই ডিভাইডার তুলে দিলে দুর্ঘটনা কমবে।
তবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনারোধে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত নিজ উদ্যোগে সোমবার (৯ জানুয়ারি) এ ডিভাইডারে রিফ্লেকশন স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নাভারন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান। তিনি বলেন, আমরা ডিভাইডারে স্টিকার লাগিয়েছি যাতে দূর থেকে চালকরা ডিভাইডার দেখতে পান। এ ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
ঝিকরগাছার সেবা সংগঠনের সভাপতি মাস্টার আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, গত দুই বছর ধরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের জানমালের কথা বিবেচনা করে ডিভাইডার তুলে দেয়া উচিৎ। এ ডিভাইডার নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, যানবাহন চালক এবং যাত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, আগামী ২১ জানুয়ারি সেবা সংগঠনের পক্ষ থেকে ডিভাইডার তুলে দেয়ার দাবিতে প্রতিবাদী অবস্থান নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজি ওয়ালিউল হক বলেন, শুধুমাত্র ডিভাইডারের কারণে নয় বরং চালকদের অসাবধানতায় এই দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকরা যদি নিয়ম মেনে সড়কে তার লেন দিয়ে চলেন তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবেনা। এছাড়া রাতের বেলা কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। তিনি আরো জানান, অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী সপ্তাহের মধ্যে রেলক্রসিংয়ের আগে রা¯ত্মায় যে গতিরোধক আছে তারও ১৫/২০ ফুট সামনে অšত্মত পাঁচটি করে র্যাম্বল স্ট্রিপ (গতিরোধক) দেওয়া হবে। ডিভাইডার নির্মাণে কোন ত্রম্নটি বা অপ্রয়োজনীয় নয় বলে তিনি দাবি করেন। রেল চলাচলের কারণে মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিভাইডার তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলেও তিনি জানান।