১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মুমিন জীবনে নামাজের প্রভাব
93 বার পঠিত

ইমানের পর ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল— নামাজ। এটি ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের একটি। আল¬াহর সঙ্গে একান্তে কথা বলার মাধ্যম। জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম অবলম্বন। নবীজি সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে—তাবেইন ও সালফে সালেহিনের জীবনে নামাজের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি লক্ষ করা যায়।

হজরত নাফে (রহ.) বর্ণিত, হজরত ওমর (রা.) তার খেলাফতকালে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরদের কাছে ফরমান পাঠান— আমার কাছে তোমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো— নামাজ। সুতরাং যে নামাজকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আদায় করল, সে তার দ্বীনকে সংরক্ষণ করল। আর যে নামাজকে (উদাসীনতায়) নষ্ট করল, সে নামাজ ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য কাজেরও অধিক নষ্টকারী হবে...।’—মুয়াত্তা মালেক : ০৬

নামাজে পার্থিব—পারলৌকিক নানাবিধ কল্যাণ এবং প্রত্যক্ষ—পরোক্ষ অনেক প্রভাব রয়েছে। যেমন—

গোনাহ মাফ হয় : নামাজ শুরু করতে পবিত্রতা ও অজুর প্রয়োজন হয়। অজু কেবল ব্যক্তির দৈহিক এবং বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতাই এনে দেয় না; তাকে পাপের পঙ্কিলতা থেকেও পবিত্র করে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল¬াহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন বান্দা যখন অজু করে, অজুতে সে যখন তার মুখম—ল ধৌত করে তখন তার মুখম—ল থেকে পানির সঙ্গে ওইসব গোনাহ ঝরে পড়ে, যার দিকে সে দুই চোখ দিয়ে তাকিয়েছিল।

এরপর যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন দুই হাত থেকে পানির সঙ্গে ওইসব গোনাহ ঝরে পড়ে, যা সে হাত দিয়ে করেছিল। এরপর যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওইসব গোনাহ বের হয়ে যায়, যার মধ্যে সে পা দিয়ে চলেছিল। পরিশেষে সে গোনাহ থেকে পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’ —সহিহ মুসলিম : ২৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তিনি রাসুলুল¬াহ (সা.)—কে বলতে শুনেছেন, ‘বলো তো, যদি তোমাদের কারও বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে? তারা বললেন, তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে না। হজরত রাসুলুল¬াহ (সা.) বলেন, এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল¬াহতায়ালা (বান্দার) গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।’ —সহিহ বোখারি : ৫২৮

অন্যায়—অশ¬ীলতা থেকে বিরত রাখে : নামাজ ব্যক্তিকে অন্যায়—অপরাধ ও অশ¬ীলতা থেকে বিরত রাখে। কোরআন মাজিদের সুরা আনকাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী,) ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তেলাওয়াত করো এবং নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ¬ীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল¬াহর জিকিরই তো সর্বাপেক্ষা বড়। তোমরা যাকিছু করো আল¬াহ তা জানেন।’

বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মানুষ যদি পাক—পবিত্রতায় সতর্ক থেকে, খাওয়া—পরায় হালাল—হারাম মেনে, রুকু—সেজদায় ধীরস্থিরতা বজায় রেখে এবং উদ্দেশ্যের প্রতি একান্ত মনোযোগী হয়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করে, তবে তা অবশ্যই তাকে অন্যায়—অশ¬ীলতা থেকে বিরত রাখবে।

আল¬াহর নৈকট্য লাভ হয় : নামাজ আল¬াহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। হৃদয়ে প্রশান্তি ও চোখের শীতলতা নামাজের মধ্যে নিহিত। নামাজে—সেজদায় বান্দা তার রবের অতি কাছে পৌঁছে যায়। আল¬াহতায়ালা বলেন, ‘সাবধান! তার আনুগত্য করো না, সেজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।’—সুরা আলাক : ১৯

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, হজরত রাসুলুল¬াহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা আল¬াহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় যখন সে সেজদায় থাকে। অতএব, তোমরা (সেজদায়) অধিক পরিমাণে দোয়া পড়ো।’

চেহারার উজ্জ্বলতা ও মর্যাদা বাড়ে : নামাজে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারিতা রয়েছে। নামাজ মানুষের স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক, হতাশা—অস্থিরতা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যথা, প্যারালাইসিসসহ বহুমূত্র ইত্যাদি রোগপ্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। নামাজি ব্যক্তির চেহারায় আলাদা এক উজ্জ্বলতা ও দীপ্তিভাব পরিলক্ষিত হয়।

তাছাড়া নামাজিকে সমাজের মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখে থাকে। হজরত সাওবান (রা.) বর্ণিত, হজরত রাসুলুল¬াহ (সা.) তাকে বলেন, ‘তুমি আল¬াহর জন্য বেশি বেশি সেজদা করবে। তুমি যখনই আল¬াহর জন্য একটি সেজদা করবে, আল¬াহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন।’—সহিহ মুসলিম : ৪৮৮

এছাড়া নামাজে ব্যক্তির প্রত্যক্ষ—পরোক্ষ বহুবিধ কল্যাণ, কার্যকারিতা ও প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে নামাজ না পড়ার কারণে জীবন থেকে বরকত উঠে যায়, চেহারার উজ্জ্বলতা চলে যায়, দোয়া কবুলের সম্ভাবনা কমে আসে, সর্বদা হৃদয়—মনে হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করে। নামাজের প্রতি উদাসীনতা অথবা নামাজ না পড়ার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারির ঘোষণাও এসেছে। ‘ধ্বংস ওইসব নামাজিদের জন্য, যারা নামাজে উদাসীনতার পরিচয় দেয়।’—সুরা মাউন : ৪—৫

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram