ইমরান হোসেন পিংকু : যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের গেটে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা। শিশু শিক্ষার্র্থীদের টার্গেট করে এসব খাবার তৈরি হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি থাকছে উপেক্ষিত। শিক্ষার্থীরা গেটের ফাঁক দিয়ে, গ্রিলের নিচ দিয়ে এসব খাবার সংগ্রহ করছে। কখনোবা প্রকাশ্যে রাস্তার উপর থেকে কিনছে ঝুঁকিপূর্ণ এসব খাবার। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ক্যান্টিন না থাকায় বাইরের ব্যবসায়ীরা এসব খাবার বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে।
যশোর শহরের মুজিব সড়কে সব চেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল। স্কুল গেটের মধ্যে ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে পানি, রং ও মাছের বরফ মেশানো গোল্লা ও শরবত। ক্লাস থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা রঙিন গোল্লা ও পানীয় দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, শহরের ঈদগাহ মোড়ে অবস্থিত বাদশাহ ফয়সল ইসলামী ইন্সটিটিউট। এই বিদ্যালয়ের গেটের সামনে ভ্যানে খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে পুড়া মবিলের মত কালো তেলে ভাজা শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও আলুর চপ। পাশে আর এক ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে ফুচকা। সেখানে এক বালতি পানির মধ্যে বারেবার প্লেট ধুয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার।
এমন দৃশ্য শুধু জিলা স্কুল বা বাদশাহ ফয়সল ইসলামী ইন্সটিটিউটের গেটে নয়। শহরের কালেক্টরেট স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই দৃশ্য। কোথাও অস্বাস্থ্যকর পানীয়, কোথাও চলছে ভাজা-পোড়া খাবার বিক্রির ধুম।
অভিভাবকরা বলছেন, ‘লেবু ও চিনি দিয়ে শরবত তৈরির কথা বলা হলেও আসলে স্যাকারিন, কাপড়ের রঙ ও লেবুর সুগন্ধযুক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। এছাড়া টিউবওয়েলের পানি বা বাড়ি থেকে বরফ তৈরির কথা বলা হলেও ঐ বরফ আসলে মাছে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা। এসব খাবার কতটা অস্বাস্থ্যকর তা বলে বোঝানো যাবে না। তবুও বাচ্চারা না বুঝে এসব ‘বিষ’ খাচ্ছে।’ শিক্ষার্থীরা বলে, শহরের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন নেই। ফলে ক্ষুধা লাগলে বাধ্য হয়ে বাইরের দোকানের খাবার খেতে হয়।’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ চিকিৎসক জসিম উদ্দিন বলেন, অস্বাস্থ্যকর এসব খাবার খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসব খাবারে ক্ষতিকর মুখরোচক দ্রব্য মেশানো হওয়ায় বাড়ির খাবারের প্রতি অনীহা ও অরুচি বাড়ছে শিশুদের। এছাড়া খোলা অবস্থায় বিক্রি করায় নিম্নমানের এসব খাবার থেকে শিশুদের হেপাটাইটিস, টাইফায়েড এবং লিভার ও কিডনির বিভিন্ন জটিল সমস্যা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।’
কালেক্টরেট স্কুলের অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের আলী বলেন, স্কুলে নিজস্ব ক্যান্টিন নেই। শিক্ষার্থীদের বারবার বলা হয় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসার জন্য। তবুও কিছু শিক্ষার্থী আছে; যারা নিষেধ করার পরও বাইরের খাবার খায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্লাসে অস্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে খারাপ দিকগুলো নিয়ে কথা বলি। এছাড়া খাবার বিক্রির দোকান সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলেও আশেপাশে যেয়ে তারা আবার দোকান বসায়।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করার আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জীবিকার স্বার্থে ফুটপাতে খাবার বিক্রি করতে পারেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে সেটা স্বাস্থ্যকর খাবার হতে হবে। অস্বাস্থ্যকর হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’