১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘মানসিক নির্যাতনে’ আত্মাহুতি দিলেন যবিপ্রবির গাড়ি চালক

নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্মস্থলে ‘মানসিক নির্যাতনের’ শিকার হয়ে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জ্যেষ্ঠ চালক মফিজুর রহমান। গত শুক্রবার রাতে (২৯ ডিসেম্বর) গায়ে আগুন দেয়ার পর সোমবার রাতে (০১ জানুয়ারি) ঢাকা চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর আগে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেসবুক ভিডিওতে তিনি কর্মস্থলে ‘মানসিক নির্যাতনের’ অভিযোগ করেন এবং মারা গেলে (যবিপ্রবি)‘র পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। মফিজুরের গায়ে আগুন দেয়ার পর পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যবিপ্রবি’র ২২ জন চালক ও হেলপার।

যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারিবারিক মামলার অভিযোগ তুলে যবিপ্রবি’র জ্যেষ্ঠ চালক মফিজুর রহমানকে প্রায় ছয় মাস বসিয়ে রাখা হয়। এসময় তাকে কোনো গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ‘জব অব নেচার’ পরিবর্তন করে তাকে অফিসের কাজে সংযুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনিসহ চালক ও হেলপারদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ওই চিঠি পাওয়ার পর ‘পিয়নের কাজ করতে হবে’ এই মানসিক যন্ত্রণায় মফিজুর ২৯ ডিসেম্বর রাতে বাড়িতে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে আগুন নিভিয়ে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে (০১ জানুয়ারি) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এর আগে ফেসবুক ভিডিওতে মফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ৮ মাস জাফিরুল স্যার আমাকে অন্যায়ভাবে বসিয়ে রেখেছে। গত দু’দিন আগে অফিসিয়াল কাজের জন্যচিঠি দিয়েছে এবং বলেছে আমাকে আর কখনই গাড়ি দেবে না। এ কারণে মনের কষ্টে ক্ষোভে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি মরে যাই তাহলে ওই পরিবহণ প্রশাসকের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।’

এদিকে, মফিজুর গায়ে আগুন দেওয়ার পর পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ‘উপাচার্যপন্থী শিক্ষক’ প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূক আচরণের অভিযোগ এনে কর্মচারী সমিতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর তার অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ২২ জন চালক ও হেলপার।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন দপ্তরের কর্মরত ড্রাইভার—হেলপারগণের সাথে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তেল মাপা কমিটি কর্তৃক মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও পরিবহন প্রশাসক বিভিন্ন সময় কর্মরত ড্রাইভার—হেলপারদের তেল চোর বলেন।

এমনকি তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও বলেন, ‘তোরা তো তেল চোর তোদের নামাজ পড়ে কি হবে?’ এভাবে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেন।
এছাড়া একজন সিনিয়র ড্রাইভারকে বিনা অপরাধে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সিনিয়র ড্রাইভার মফিজুর রহমানকে অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হলে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং অপমানিত হওয়ায় রাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে যান।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অগ্নিদগ্ধ মফিজুর হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী’কে বলে যান ‘আমার যদি কিছু হয় তুমি যানবাহন কর্মকর্তা ও পরিবহন প্রশাসকের নামে মামলা করবে।’

এদিকে, এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলাম বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ড্রাইভার মফিজুর রহমানের চরিত্র ভাল না। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হেলপারের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। এখন তার দুই স্ত্রী। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাকে গাড়ি থেকে সরিয়ে এনে পরিবহণ পুলের গাড়ির সুপারভিশন করার দায়িত্ব দেয়া হয়। রেজিস্ট্রারসহ উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। মূলত পারিবারিক বিষয় নিয়ে কলহে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। পারিবারিক কারণে সে গায়ে আগুন দিতে পারে।
ভিডিওতে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘তাকে দিয়ে একটি মহল ওইসব কথা বলিয়েছে।’

এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসনে বলেন, একজন সহকর্মীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘গ্রাউন্ডস্’ করা হয়েছে। শুধু মফিজুর নয়; তিনজন চালকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরও যেহেতু সে সিনিয়র ড্রাইভার এ কারণে তাকে গাড়িগুলোর অফিসিয়াল সুপারভাইজারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে তার অভিযোগ সঠিক নয়। এরপরও যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে এজন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram