লোকমান হোসেন, মোংলা : খুলনার দাকোপ উপজেলার পশুর নদীর কূল ঘেষা মোংলার একমাত্র যৌনপল্লী বানিশান্তা পতিতা পল্লী। পল্লীর বেশির ভাগ যৌনকর্মী মধ্যবয়সী। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০এর মধ্যে। চল্লিশোঊর্ধ্ব অর্ধ শতাধিক যৌনকর্মী কর্মহীন হয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এক সময়ে জৌলুস জীবন ছিল তবে এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন কষ্ট।
সরেজমিনে জানাগেছে, নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা তাদের। যৌনকর্মক্ষমতা হারিয়ে অন্যের ঘরে ঝিঁয়ের কাজ করছেন। বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য সহযোগিতা তা খুবই অপ্রতুল। দু’চারজন যৌনকর্মীদের ঘরে ঝিঁয়ের কাজ করলেও সিংহভাগেরই পেট চলে চেয়েচিন্তে। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা বহুবার।
এখানে অধিকাংশ যৌন কর্মী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থায় ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুগছেন আর্থিক অস্বচ্ছলতায়। যৌনকর্মীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিšিত্মত। এমতাবস্থায় বিকল্প কর্মসংস্থান ও সরকারিভাবে পুনর্বাসনেরও দাবি তুলেছেন তারা।
বর্তমানে উন্নয়ন সংস্থা সিএসএস যৌনকর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বিশেষ করে এইচ আইভি(এইডস) এর বিরুদ্ধে কাজ করছে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নয়নে এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের সহযোগিতা ও সদিচ্ছা চান বঞ্চিত এ সব নারী।
এ প্রসঙ্গে যৌনকর্মী খাদিজা আক্তার তুলি (ছদ্মনাম) বলেন, জীবনেতো শান্তি পেলামই না। মরেও শান্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। মৃত্যুর পর আমাদের লাশ নিয়েও জুট ঝামেলা পোহাতে হয়। সাধারণত, মুসলিম মৃত ব্যক্তি জানাজা ও দাফন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানে দাহর নিয়ম থাকলেও আমাদের বেলায় রয়েছে অবহেলা-অবজ্ঞা। লাশ নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া।
ইমাম সাহেবও জানাজা পড়াননা। লাশ দাফনের অনুমতির অপেক্ষায় ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। অবশেষে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কবরস্থান ফৌতি গোরস্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। তিনি সরকারের কাছে আলাদা কবরস্থানের ব্যবস্থা করার দাবিও করেন।
যৌনকর্মী সাথী (ছদ্মনাম) বলেন, সন্তানদের বাবার পরিচয় গোপন করে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। আমাদের অনেক ছেলে মেয়েরা এজন্যে লেখাপড়াও করতে পারছে না। তিনি সরকারের কাছে তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো একটি স্কুলে পড়াশুনা করার সুযোগ চান।
যৌনকর্মী রাহিলা (ছদ্মনাম) বলেন, আমাদের এখানে নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, চিকিৎসার অভাব, ভেড়িবাঁধের ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। নিজেদেরই পেটই চলেনা, উন্নত মানের স্যানিটেশন করবো কিভাবে? তিনি সরকারের কাছে এখানে ভালো মানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নদীর তীরে ব্লক দিয়ে টেকশই ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। একই সাথে চিকিৎসার জন্যে এখানে উন্নত মানের একটি হাসপাতাল তৈরিরও দাবি করেন।
তাদের মতো অন্যরাও নানান সমস্যা, আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন ব্যবস্থা দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, যৌনপল্লিটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে। সরকার থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়া হয় তাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, পাওয়া সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয়। যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এজন্যে আমরা চেষ্টা করছি। তবে শুধু পুনর্বাসন করলে হবে না তাদের স্থায়ী আয়ের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে পুনরায় এ ধরনের নেতিবাচক কাজ করা না লাগে’।