বিশেষ প্রতিনিধি : মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নসিমন-করিমন-ইজিবাইক-থ্রিহুইলারসহ বিভিন্ন অনঅনুমোদিত ছোট বাহন। দ্রুত গতির বড় গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে চলা ছোট ছোট বাহনে যেমন আছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তেমনি মহাবিপদ। প্রতি নিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিটি দুর্ঘটনায় এক একটি পরিবারে নামছে বড় বিপর্যয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরের লেবুতলায় এমনই একটি দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৭প্রাণ। শোক সাগরে ভাসছে ৪টি পরিবার।
যশোরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী ৩ চাকার যানবাহনগুলির মধ্যে বেশি পরিচিত ইঞ্জিন চালিত রিক্সা, ভ্যান, নসিমন, করিমন, ভটভটি, মাটি টানার ট্রলি, ইজিবাইক, মাহেন্দ, স্ক্রুটার। এছাড়াও আছে স্যালো ইঞ্জিন বা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন তৈরি যানবাহন। এ সব বাহনের গতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে।
বাহনগুলির ব্রেক স্বীকৃত নয়। সড়ক-মহাসড়কের ভারী যানবানগুলোর গতি থাকে বেশি। অনঅনুমোদিত ৩ চাকার বিভিন্ন গতিবিশিষ্ট বাহন মহাসড়কে চলার সময় কোনো নিয়ম কানুন মানে না। যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, কোনো নিয়ম না মেনে যেখানে সেখানে সড়কের মাঝেই ঘোরানো, পার্শ্ব সড়ক থেকে কোনো রকম সতর্কতা অবলম্বন ছাড়াই সড়ক-মহাসড়কে প্রবেশ করা এখন নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া মাটি টানার ট্রলিগুলো রাস্তায় চলার পথে মাটি ফেলতে ফেলতে যায়, পরে পানি পড়লে তা পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত হয়, শুকালে ধুলো ভরে যায়। এটিও দুর্ঘটনার অতিরিক্ত কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বহুবার।
ফলে সড়ক-মহামড়কে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবৈধ ৩ চাকার যান এখন সুবিধার চেয়ে অসুবিধা ও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুলনা-যশোর, যশোর- বেনাপোল, যশোর-মাণিরামপুর-কেশবপুর, যশোর-নড়াইল, যশোর-মাগুরা-ঢাকা, যশোর-ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া যতগুলো সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে সর্বত্রই প্রতিদিনই বাড়ছে ৩ চাকার বাহনগুলির অতিমাত্রায় চলাচল।
যশোর থেকে চাকরির সুবাদে খুলনায় যাতায়াতকারী আশরাফুল ইসলাম জানান, চলার পথে রাজারহাট পর্যন্ত খুববেশি ইজিবাক, ভ্যান-রিক্সা পথ রোধ করে চলে, বাস চলাচল সমস্যা হয়, রূপদিয়া পর্যন্ত কম আবার বসুন্দিয়া পর্যন্তও অনেক ইজিবাইক, ভ্যান, থ্রিহুইলার সড়ক জুড়ে চলাচলে জট পাকায়।
যশোর থেকে মাগুরাগামী কুষ্টিয়ার স্বরুপ বলেন, খাজুরা স্ট্যান্ড থেকে একপ্রকার মনোহরপুর এবং লেবুতলা পর্যন্ত এই থ্রিহুইলারের জন্যে বাসগুলো চলতে সমস্যা হয়, আবার কোনো কোনো বাস অতিরিক্ত গতিতে চলে ফলে যাত্রীদেরকে প্রাণ হাতে নিয়ে গাড়িতে চলতে হয়। অপরযাত্রী আলী হাসান জানান, মাগুরা কাউন্টারে সময় বেঁধেদেয় ফলে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে তাই হঠাৎ হঠাৎ থামতে হয় এতেও ছোটগাড়ির সাথে দুর্ঘটনা ঘটে। একই চিত্রের কথা বলেন, বেনাপোল ও ঝিনাইদহে নিয়মিত চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রী।
খাজুরার সোলাইমান হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, সড়কের কোনো শৃঙ্খলাও নেই। বেপরোয়া কিছু বাস-ট্রাক আছে। ছোট গাড়িগুলোর চলাচলের আলাদা ব্যবস্থা নেই। ছোট গাড়িগুলো স্বল্প দূরত্বের জন্য প্রয়োজন। এগুলো তুলে দেয়া ঠিক হবে না। একই সাথে সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুপাশের অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট, নির্মাণসামগ্রী সরানো জরুরি।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮এর ৩৭(১) ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে- কোনো ব্যক্তি, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায়, মহাসড়কের ঢাল হতে উভয় পাশে ১০ (দশ) মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা (যেমন: হাট-বাজার, দোকান, ইত্যাদি) নির্মাণ করতে পারবেন না।
এরপরও কোনো পরিবর্তন নেই সড়ক ব্যবস্থাপনায়। রাস্তার পাশে যেমন জায়গা নেই, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধযানের দাপটেরও কমতি নেই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, মহাসড়কে ৩ চাকার অবৈধযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আমাদের পক্ষ থেকে বার বার প্রশাসনকে বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে দেন দরবার করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি তারপরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, শুক্রবারের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ইজিবাইক, সেটি ফিডার রোড থেকে উচ্চ গতিতে মহাসড়কে উঠেছে এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি ছিল তার যাত্রী। দুর্ঘটনা ঘটলে বাস-ট্রাকের ড্রাইভারদের ওপর দায় বেশি চাপানো হয় অথচ যাদের কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে তারা থাকে এর সাজা বা আইনের বাইরে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আবারো মহাসড়কে ৩ চাকার অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে যাবো, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।