সোমেল রানা, মেহেরপুর : মসজিদ ভারত অংশে। ভারতের কোন মুসলিম ওই মসজিদে নামাজ পড়েন না। যে দু‘একজন নামাজি আছেন তারা সকলেই বাংলাদেশের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে মসজিদটি মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা সীমান্তবর্তী গ্রাম নবীননগরের খালপাড়ায় স্থাপিত হয়।
শতবর্ষী মসজিদটিতে এখনো নিয়মিত আজান ও নামাজ হয়- তবে মুসল্লির সংখ্যা মাত্র কয়েকজন। খালপাড়ায় নতুন আরেকটি মসজিদ নির্মিত হওয়ায় মুসল্লিরা নতুন মসজিদে নামাজ আদায় করলেও খালপাড়া গ্রামের তিনজন মাত্র ওই মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লি। মসজিদটি ভারত অংশে হলেও সীমান্তের কাঁটাতারের এপারে দেড়শ গজের মধ্যে। ফলে ভারতের কোন নাগরিক ওই মসজিদে আসতে পারেনা।
ভারতের কোন নাগরিকও মসজিদটি সংস্কারে এগিয়ে আসেনা। এপারে নবীননগর গ্রামের খালপাড়ার লোকজন ও সরকারিভাবেও মসজিদটি সংস্কার করতে পারেনা ভারতের মাটিতে হওয়ায়। তবে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কোন বাধা হয় না ওই মসজিদে এপারের মানুষের নামাজ আদায়ে। সরেজমিনে বুধবার নবীননগর সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের পাশ দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে।
খালের ওপারে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। কাঁটাতারের বেড়া ঘেষে ওপারে এখনও কয়েকটি পরিবারের বসবাস। সীমান্তের এপার ওপারের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বোঝা গেল একে অপরের কুশল বিনিময় দেখে। আরও জানা গেল দু‘পারের মানুষই তারা নিকটাত্বীয়। কোন নিকটাত্বীয় মারা গেলে উভয় দেশের বর্ডারগার্ড মৃতর স্বজনের লাশ দেখার সুযোগ করে দেয়।
নবীননগর খালপাড়ার বয়োবৃদ্ধ নজরুল ইসলাম (৮২) জানান, ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সরকার নবীননগর গ্রামের ভারতের অংশের ২০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয় সীমান্ত থেকে। ২০০৩ সালে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সময় নবীননগর গ্রামের ভারতের ওই অংশ কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে চলে যায়। নবীননগর খালপাড়াতে বাংলাদেশ অংশের ৪০ পরিবার নিজ ভূমিতেই থেকে যায়। তিনি, হিসাব আলী ও রহমত হোসেন ওই মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। এখনও তারা তিনজন নিয়মিত মুসুল্লি। শুক্রবারে জনাদশেক মুসুল্লি হয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নও করেন ওই তিনজন। বাকি জীবনটা এ মসজিদেই নামাজ পড়ে যেতে চান। তাদের অভিযোগ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে মসজিদ হওয়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই দেশ সংস্কার কাজে এগিয়ে আসেনা।
নিয়মিত মুসুল্লি হিসাব আলী (৬২) বলেন, দেশ বিভাগের পরও উভয় দেশের মুসলিমরা গ্রামের এই একটি মসজিদেই নামাজ পড়তাম। এমনকি উভয় দেশের মুসলমানরা চাঁদা তুলে ইট পুড়িয়ে মসজিদটি সংস্কার করেছে। তিনি আরও জানান, বিজিবি-বিএসএফ মসজিদটির পাশে বসে পতাকা বৈঠক করে। নামাজের সময় পতাকা বৈঠকের সৈনিকেরাও নামাজে অংশ নেন।
বুড়িপোতা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ জামাল বলেন, বৃটিশ আমলের কোন এক সময়ে জমিদার নবীন বাবু ওই স্থানে তার অনুগত প্রজাদের বসিয়ে জমিদারি দেখাশুনা করতেন। তার নামানুসারে স্থাপিত নবীননগর গ্রামের ২৪০ পরিবারের জন্য মসজিদটি গড়া হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলেও উভয় অংশের মুসলিমরা ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ অংশে নতুন মসজিদ তৈরি হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নতুন মসজিদেই নামাজ আদায় করেন। তবে তিনজন এখনও ওই পুরাতন মসজিদেই নামাজ আদায় করছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, মসজিদটি ভারতের মাটিতে। মুসুল্লিরা কোন ধরণের ঝুঁকিতে না পড়ে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) লক্ষ্য রাখেন।