সাইফুল ইসলাম : যশোর শহরের বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডের কৃষি অফিসের (খামার বাড়ি) সামনে ছিল দুটি কন্টিনার ডাস্টবিন। খামারবাড়ি সংস্কারকালে গেল বছর ডাস্টবিন উঠে যায়। বর্তমানে ঢাকা রোডের হাইকোর্ট মোড় থেকে মণিহার কোন ডাস্টবিন নেই। মানুষ যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই ফেলছে ময়লা। বেশি ফেলছে ড্রেনে।
একইভাবে সৌন্দর্য রক্ষায় সদর ভুমি অফিসের সামনের ডাস্টবিন তুলে দেয়া হয় বড় সাইনবোর্ড, ‘ময়লা ফেলা নিষেধ’। জায়গা না থাকায় মানুষ সেই সাইবোর্ডের নিচেই ফেলছে ময়লা। এভাবে প্রতিনিয়ত কমছে ময়লা ফেলার জায়গা। উপায়ন্ত না পেয়ে শহরবাসী যেখানে সেখানে ফেলছে ময়লা, এতে ভরছে ড্রেন। অবশ্য পৌরসভার হিসেবে তাদের ডাস্টবিন সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
যশোর পৌরসভার হিসেবে ৯ টি ওয়ার্ডে প্লাস্টিক ডাস্টবিন আছে ২১৭ টি, কন্টিনার ডাস্টবিন ৯০ টি এবং হাউজ ডাস্টবিন ১০ হাজার। শহরের রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ব্যারেল কেটে তৈরি ডাস্টবিন কোথাও নেই। কন্টিনার ডাস্টবিন প্রতিনিয়তই কমছে। শহরের বাসিন্দাদের কেউ তার বাড়ি বা জমির সামনে ডাস্টবিন রাখতে চাননা। স্বাভাবিকভাবেই ডাস্টবিন উঠাতে চলে নানা তৎপরতা।
কোন কোন স্থানে ডাস্টবিন ওঠাতে মাস্তান ভাড়া করার ঘটনাও ঘটেছে। রাতারাতি ডাস্টবিন উঠিয়ে দেয়া হয়েছে বালি। সম্প্রতি হাউস ডাস্টবিনের নামে শহরে বিতরণ করা হয়েছে ছোট ছোট ডাস্টবিন। ওই ডাস্টবিনের ময়লাও অপসারিত হয় ড্রেনে অথবা রাস্তার উপর।
যশোর চাঁচড়া থেকে পালবাড়ি মেইন রোডের পাশের কয়েক জায়গায়, মনিহার ট্রাক স্ট্যান্ড, বিসিএমসি কলেজের পাশে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনে, ঢাকা রোড বাবলাতলা ব্রিজের পাশে, শংকরপুর চাতাল মোড়ের আশেপাশে কয়েক জায়গায়, চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডের পাশে, কারবালা, চাঁচড়া বাজারসহ শহরের বিভিন্নস্থানে সড়কের পাশে ফেলা হয় ময়লা-আবর্জনা।
রাস্তার উপর হলেও পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মিরা প্রতিদিন সকালে এসব ময়লা অপসারণ করে। সারদিন ফেলা হয় ময়লা। শুধু বাসাবাড়ি নয়, দোকানপাট, হোটেল, কমিউনিটি সেন্টারের উচ্ছিষ্টও রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। কুকুর, কাক, মুরগি, গরু, ছাগল ময়লাগুলো ছিটিয়ে দেয় চারিদিক। ময়লা আবর্জনার সাথে দুর্গন্ধে অপরিচ্ছন্ন শহরে পরিনত হচ্ছে যশোর।
শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের জন্য চালু আছে ভ্যান পরিষেবা। এ সেবা পেতে বাড়ির মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে হয়। এ জন্য অনেকে এ সেবা নিতে চান না। তাছাড়া ময়লার গাড়ি ঠিকমত না যাওয়ায় বাসা বাড়িতে ময়লা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তখন তারা এ ময়লা গাড়িতে না দিয়ে রাস্তায় ফেলতে বাধ্য হন।
যশোর শহরের মনিহার এলাকার বাদশা মিয়া বলেন, যশোর একটি সুন্দর শহর। কিছু এলাকার কয়েকটি স্থানে এই ময়লার দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। বিশেষ করে কয়েক মাস বেশি সমস্যা হচ্ছে। ময়লার আবর্জনা ফেলার কারণে ড্রেন আটকে যাচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে এখানে ব্যবসা করা খুবই কষ্টকর।
মণিহার ঢাকা রোডে এলাকার ভাড়াটিয়া আমিনুর রহমান বলেন, মণিহারের এই রোডটি খুবই সুন্দর করে নির্মাণ করা হলেও তার সৌন্দর্য ময়লা আবর্জনার কারণে নষ্ট হচ্ছে। এখানে স্থায়ী একটি ডাস্টবিন হলে এভাবে ময়লা আবর্জনা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো না।
পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতি লাল বলেন, পৌর সভার কাউন্সিলররা হরিজনদের বাদ দিয়ে তারা তাদের মতো লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। তাদের বেতন ভাতা ঠিক মতে দেয়া হয়না। পৌরসভার কাজ থেকে হরিজনদের বাদ দেওয়ায় ৬০/৭০ কর্মী এখন খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। যারা কাজে আছে, তারা প্রতিদিন প্রায় ৮০ টন ময়লা ময়লাখানায় ফেলে।
এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, আমারা ডাস্টবিন দিয়েছি কিন্তু মানুষ ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে ময়লা ফেলছে পাশে । আমাদের কাজের কোন ত্রুটি নেই। আমাদের শহরকে আমাদেরই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আমরা যদি নিজেরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখি তাহলে কোনদিনই শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে না। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলা নাগরিক দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা চেষ্টা করছে সব সময় শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার তাদেরও কাজের কোনো ঘাটতি নেই।