লাবুয়াল হক রিপন : যশোরের একটি বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধার হয়েছে এক যুবকের গলাকাটা অর্ধগলিত লাশ। গতকাল সোমবার দুপুরে যশোর-মণিরামপুর মহাসড়কের সদর উপজেলার বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের স্বদেব ভদ্রের বাঁশ বাগান থেকে অজ্ঞাতনামা ওই লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ওই ব্যক্তির কোন পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে গত ২০ দিনে যশোর সদরেই বাঁশ বাগান, পাটক্ষেত থেকে দুটি লাশ উদ্ধার ও শহরের মধ্যেই দুই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের ঘটনাস্থলে উপস্থিত দেব দুলাল দত্ত জানিয়েছেন, বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের আলাউদ্দিন আলা গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পানের বরজে ব্যবহারের জন্য একই এলাকার স্বদেব ভদ্রের বাগানে বাঁশ কাটতে যান। এ সময় তিনি লাশটি দেখতে পান, যেখান থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। লাশটি অর্ধগলিত গায়ে পোকা মাকড় বাসা বেঁধেছে। তার গায়ে কালো একটি গেঞ্জি, কালো স্যান্ডেল এবং কালো জিন্সের প্যান্ট পরিহিত ছিল। এরপরে তিনি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পুলিশকে অবহিত করেন।
খবর পেয়ে র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হক, কোতোয়ালি থানার এসআই তুহিন বাওয়ালী, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) পরিদর্শক হিরন্ময়সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম সেখানে হাজির হন। এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রেখেছে পুলিশ।
কুয়াদা ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক দেব দুলাল দত্ত আরো জানিয়েছেন, স্বদেব ভদ্রের বাঁশ বাগানটি যশোর-মণিরামপুর মহাসড়কের পাশেই। সে কারণে এই লাশটি বাইরের কোন লোকের হতে পারে। তাছাড়া তাকে বাইরে থেকেও হত্যা করে কে বা কারা এখানে এনে লাশটি ফেলতে পারে। এই বাগানটি অনেক বড়। তাই সহজে এবং বিনা প্রয়োজনে এই বাগানে কেউ প্রবেশ করেনা। এই লাশটি ৮ থেকে ১০ দিন আগের হবে। যে কারণে তার গায়ে পচন ধরে গেছে।
লাশ উদ্ধারের সময় পিবিআইয়ের টিম নিহতের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করেও তার শরীরে পচন ধরে যাওয়ায় হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে অজ্ঞাতনামা ওই লাশটি দেখলাম। তিনি আরো বলেছেন, বাইরে থেকে হত্যার পরে লাশটি কেউ এখানে এনে ফেলতে পারে।
পিবিআইয়ের পরিদর্ষক হিরন্ময় জানিয়েছেন, লাশটি দেখে পরিচয় সনাক্তের জন্য তার হাতের ছাপ নেয়ার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। হয়তোবা শেষ পর্যন্ত পরিচয় সনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হতে পারে।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলামের মুঠো ফোনে রিং করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হক জানিয়েছেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশটি দেখলাম। কিন্তু তার শরীরে পচন ধরে যাওয়ায় যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচয় জানা সম্ভব হচ্ছে না। লাশটি ময়না তদন্তের পরে ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় জানার চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন থানা ও জেলায় বার্তা পাঠিয়েও পরিচয় জানার চেষ্টা করা হবে।
উল্লেখ্য গত ২৬ জুন মণিরামপুরের হাকোবা গ্রামের বাসিন্দা মাছের আড়তের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন যশোর শহরের বকচর সাব্বির ফ্লাওয়ার মিলের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তিনজন আসামি আটক করে।
৭ জুলাই যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় খুন হয় রুস্তুম আলী নামে এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় মামলা হলেও কোন আসামি আটক হয়নি।
৮ জুলাই সদর উপজেলার নতুনহাট পাবলিক কলেজের পেছনের পাট ক্ষেত থেকে বুলবুল হোসেন নামে এক ইজিবাইক চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার মামলায় পুলিশ সাতজনকে আটক করে। তারা সকলেই বুলবুল হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।