২৫শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মণিরামপুরে মুক্তিকামী পাঁচ সূর্য্যসন্তানের শহীদ দিবস আজ

মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর) : আজ ২৩ অক্টোবর যশোরের ৫ সূর্য্য সন্তানের শহীদ দিবস।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঠাঁই মেলেনি শহীদ ৫ সূর্য্য সন্তান আসাদুজ্জামান আসাদ, মাশিকুর রহমান তোজো, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন মানিক ও ফজলুর রহমান ফজলুর। শহীদ আসাদুজ্জামানের ভাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মো. শফিকুজ্জামান বলেন, তার ভাইসহ ৫ শহীদ পরিবারের প্রতি শোক জানিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত চিঠি দেয়া হয়েছিল। এটাই বড় স্বীকৃতি।

শুধু একটা সার্টিফিকেটের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে তার পরিবারের কেউ বিশ্বাস করেন না। কিছু করার থাকলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর উপজেলার চিনাটোলা বাজারের হরিহর নদীর তীরে বেয়নেট দিয়ে খঁুচিয়ে খুিঁচয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের পরে রাজাকাররা এই ৫ সূর্য্য সন্তানকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। কিন্তু শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে আজও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী চিনাটোলা বাজারে লেবার সরদার শ্যামাপদ নাথ (৭৭) এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই সময় তিনি চিনাটোলা বাজারে মুটেগিরির (শ্রমিক) কাজ করতেন।

ওইদিন রাজাকারদের নির্দেশে হরিহর নদীর ওপর ব্রিজ পাহারারত অবস্থায় দেখতে পান চোখ বেঁধে রাত ৮টার দিকে মুক্তিসেনা আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক ও ফজলুকে ব্রিজের পাশে আনা হলো।

তার কিছুক্ষণ পর রাজাকার কমান্ডারের বাঁশি বেজে ওঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে রাইফেল। মুহূর্তের মধ্যে পাঁচ তরতাজা যুবকের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

জানাযায়, তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দক্ষিণ বঙ্গের নেতা নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে এই ৫ নেতাকে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভবদহ এলাকার কপালিয়ার শানতলায় যুদ্ধ শেষে সাতক্ষীরায় যাওয়ার পর যশোর শহরে যেতে বলা হয়।

পথিমধ্যে আসাদ অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলার রত্নেস্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিলে স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আব্দুল মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহের জল্লাদ, ইসহাক, আব্দুল মজিদ, আফসারসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর তাদেরকে আটক করে চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহর নদীর ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খঁুচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেয়াসহ তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলা উদ্দীন জানান, এই পাঁচ সূর্য্য সন্তান স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুজ্জামান বলেন, তার ভাইসহ ৫ শহীদ পরিবারের প্রতি শোক জানিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত চিঠি দেয়া হয়েছিল। এটাই বড় স্বীকৃতি।

তারা ৫জনই দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন—যা সবাই জানে। শুধু একটা সার্টিফিকেটের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে তার পরিবারের কেউ বিশ্বাস করেন না। কিছু করার থাকলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

যশোর জেলা গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ—সম্পাদক কামরুল হক লিকু জানান, প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি বাম সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ কর্মসূচি নেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আজও পর্যন্ত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

রাষ্টীয়ভাবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ তাদের স্মৃতিস্মরণে কোন উদ্যোগ নেওয়া না হলেও শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বামদলের পক্ষ থেকে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

যেখানে প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা করা হয়।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আব্দুল হামিদ জানান, উল্লি¬¬খিত পাঁচ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের কবরসহ উপজেলার সকল শহীদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram