মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর) : যশোরের মণিরামপুরে প্রেমজ সম্পর্কের জেরে মেয়ের পরিবার পারভেজ হাসান (১৯) নামের এক যুবককে ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনকালে জোর করে ওই যুবকের মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয় বলে যুবকের স্বজনদের অভিযোগ। মারা যাওয়ার আগে নির্যাতনের শিকার পারভেজ হাসান হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে একটি ভাষ্যে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়ার কথা বলে গেছেন।
যার একটি ভিডিও রেকর্ডও রয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের পিতাসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। উপজেলার বাগডোব গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৩ ও ২৭ জানুয়ারি মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার পারভেজ রোববার খুলনা আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জানা যায়, যশোর সদর উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে পারভেজ হাসান শৈশব থেকেই নানা বাড়ি মণিরামপুরের বাগডোব গ্রামে থেকে পড়াশুনা করে আসছিলেন।
পারভেজ গেলো বছর এসএসসি পরীড়্গায় অংশ নেন। চলতি বছর তার বিদেশে যাবার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও করা হয়। নানা বাড়িতে থাকার সুবাদে প্রতিবেশী ডা. ইমরান হোসেনের মেয়ে রিয়ার সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
যুবকের পরিবার গরীব হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই রিয়ার পিতাসহ স্বজনরা পারভেজ হাসানের উপর মধ্যযুগীয় নির্যান চালিয়ে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ।
পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যপারী, মা কোহিনুর বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, গত ২১ জানুয়ারি শনিবার সকালে প্রতিবেশী ইমরানের মেয়ে রিয়া বাড়ি থেকে চলে যায়।
ঘটনার দু’দিন পর রিয়াকে পার্শ্ববর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তাদের নাতী ছেলে পারভেজ হাসান বাড়িতেই ছিল।
২৩ জানুয়ারি আছরের পর বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে উদ্দেশ্যে বের হলে পিতাসহ রিয়ার স্বজনরা তাদের নাতী পারভেজ হাসানকে টেনে হেঁচড়ে স্থানীয় প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সাথে বেঁধে মিজানুর রহমানসহ রিয়ার স্বজনরা পারভেজের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে দেখেন। আর না মারতে নির্যাতনকারীদের দু’পা জড়িয়ে ধরেন তারা। এক পর্যায়ে সেখান থেকে পারভেজকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে নেয়া হয়।
একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ফের রিয়ার পিতাসহ কয়েকজন মিলে পারভেজকে বেধড়ক মারপিট করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয়। রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে মারপিট করে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেবার চেষ্টা করলে পারভেজ সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে তাকে যশোর ২শ’ ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পারভেজকে খুলনা আড়[ইশ’ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যান। এ ঘটনায় পারভেজ হাসানের নানা সিদ্দিকী ব্যাপারী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন।
পারভেজের খালা জাহানারা বেগম জানান, হাসপাতালে তার কোলেই পারভেজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মারা যাবার আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে পারভেজ হাসান জানায়, তাকে মেরে জোর করে মুখের ভিতর বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। পারভেজের ভাষ্যটির একটি ভিডিও রেকর্ড স্বজনরা ধারন করে রেখেছেন।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়ার পিতা ডা. ইমরান হোসেন ও তার (ইমরান হোসেন) মামা সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তিনি মারপিটের সাথে জড়িত নন। মেয়ে পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে তার বাড়িতে এনেছিল। মেয়েপড়্গ ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দিলে তিনি ঠেকিয়ে ছিলেন।
মণিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরম্নজ্জামান জানান, ঘটনাটি জানার সাথে সাথে মামলা নেওয়ার পর জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের পিতাসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে।