* জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা
বিশেষ প্রতিনিধি: মাটির উৎস না জানা এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত মণিরামপুরের সব ইটভাটা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি এ নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য মণিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে যশোর কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম শাহীন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুশান্ত কুমার তরফদার, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র রোকেয়া পারভিন ডলি, জেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণসহ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, জমির মাটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে হলে বিক্রি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রয়োজন। মণিরামপুরে সকল ইটভাটায় মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি ব্যক্তি মালিকানার একটি মজা পুকুর সংস্কারের মাটি বিক্রিকালে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট বসিয়ে পুকুরের মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ্রই ধারাবাহিকতায় মণিরামপুরের ইউএনওকে সকল ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন সভাপতি। মাটির উৎস না জানা পর্যন্ত এ নির্দেশ কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়।
সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি কোভিডের প্রভাব বেড়ে গেছে। প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন নেয়ার উপর সরকার জোর দিচ্ছে। ঈদেরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি দপ্তর ও সাংবাদিকদেরকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে কোভিড ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এ সময় আরও জানানো হয়, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ভবন নির্মাণের টেন্ডারের পর মূল্যায়নও হয়েছে, অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। তাছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নতুন লিফট স্থাপন অথবা বর্তমানে ব্যবহৃত লিফটি যাতে ৪র্থ তলা পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী করা যায় তার প্রস্তবনা দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে খুব শিগগিরই লিফট স্থাপন হবে। এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ জানায়, মূল নকশার ক্ষতি না করে কালেক্টরেট ভবনেও লিফট স্থাপনের বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে।
সভায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার নির্ধারিত দামে যশোরে কোনো পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বাজার মনিটরিং, পরিদর্শন ও অভিযানের প্রতিও জোর দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় গণপূর্ত বিভাগ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জমি না পাওয়ায় জেলার ৮টি মডেল মসজিদ নিমার্ণ সম্ভব হয়নি, জমি পাওয়া সাপেক্ষে সরকারের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ সময় সভার সভাপতি বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত এর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যেও সংশ্লিষ্ট ইউএনওদেরকে নির্দেশ দেন এবং এটা সরকারের গৃহীত প্রকল্প জানিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার নির্দেনা দেন।
এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর সরকার খাদ্য উৎপাদনে আরো বেশি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দেয়ায় গতবারের চেয়ে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্র থাকলেও এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর ৫ শত জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ভবদহ এলাকায় অতিরিক্ত ৫ শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে বোরো চাষ ঝুঁকিহীন ও পানি প্রবাহ ঠিক রাখার স্বার্থে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থারও দাবি জানানো হয়। জেলায় চলতি মৌসুমে এখনো সারের কোনো সংকট নেই বলেও জানানো হয়।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সকলকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অভয়নগরে চাচা—ভাতিজার জমি দখল লড়াইয়ের শিকার হয়েছেন লিজ নেয়া কয়েকজন কৃষক। তারা ওই জমিতে ১০ বছর চুক্তিতে লিজ নিয়ে পানের বরজ করেন, এক একরের বেশি জায়গাজুড়ে তৈরি করা সেই ৫টি পানের বরজ পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। প্রতিটি পান মানেই টাকা, গ্রিন গোল্ড নামের এই কৃষি পণ্যটির উৎপাদন স্থল পুড়িয়ে শুধু কৃষক পর্যায়ে ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। যশোরের বাইরেও অন্য জেলায়ও পানের বরজ পুড়িয়ে দেয়া, ফসল নষ্ট করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে, কৃষির ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হচ্ছে।
সভায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ও পতিত গাছ অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে যশোর নড়াইল সড়কের গাছও অপসারনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ সময় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যশোর বেনাপোল সড়কের মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে অপসারণের আহ্বান জানানো হয়। মানুষের জানমালের জন্যে যা নিরাপদ নয় সেগুলি কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণের উদ্যোগ নেয়া যায় সে বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করারও আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় সভার পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের ভবন সংরক্ষণ ও সংস্কার করে ইতিহাস—ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখারও আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে পুরাতন রেজিস্ট্রি ভবন সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। সভা থেকে সিইও ছাড়াও জেলা প্রশাসক জানান, জেলা পরিষদ ভবন ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত সরকারি ও বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারি না তবে এখানকার মানুষের চাওয়া—পাওয়া ও ‘সেন্টিমেন্ট’ এর বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাছাড়া রেজিস্ট্রি অফিস কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেটা নিয়েও কাজ চলছে।
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, খাদ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, বাজারকর্মকর্তা, বিদ্যুৎ বিভাগ, সমাজসেবা দপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগ নিজ নিজ দপ্তরে গৃহীত ব্যবস্থা তুলে ধরে।