সমাজের কথা ডেস্ক: ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে ভারতের মণিপুর। কারফিউ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না প্রশাসন। কারফিউ অমান্য করেই শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
দুই মাস আগে নিখোঁজ হওয়া ২০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে হত্যার প্রতিবাদে মণিপুরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের নিথর দেহের ছবি নাড়া দেয় হাজার হাজার মানুষকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শত শত বিক্ষোভকারীমুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারী তখন মুখ্যমন্ত্রী ফাঁকা বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এর আগেরদিন বিজেপি প্রধান শারদা দেবীর বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
মণিপুরে দায়িত্বপালন করা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রায় ঢুকে পড়েছিল বিক্ষোভকারীরা। ২০০ মিটার দূরে তাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হন তারা। রাত সোয়া ৯টার দিকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে ৬ জুলাই নিখোঁজ হওয়া ওই দুই তরুণকে কুকি সম্প্রদায়ের কেউ অপহরণ ও হত্যা করে থাকতে পারে।
মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান।
এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ শতাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে। গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে— তাদেরকে এসটি শ্রেণীভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়। এরপর মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আর তা এখনো চলছে।