খুলনা প্রতিনিধি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন হলো ভোটারের অধিকার। আর ভোটারের অধিকার কেউ খর্ব করতে যাবেন না। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তাদের ভোট প্রদানে কেউ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে সেটা বরদাস্ত করা হবে না। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুরের নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। এর আগে গাইবান্ধার নির্বাচনও আমরা বন্ধ করেছিলাম। সুতরাং প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবেন না, প্রভাব খাটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা।
প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ভোটারদের মন জয় করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করুন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সরকারও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোন অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন। তারা সমাধান না করলে আমাদেরকে জানাবেন। তিনি আরও বলেন, আপনাদের আচারণ বিধি মেনে চলতে হবে। কোন কর্মী যদি অপ্রীতিকর কিছু করে সে দায়ভার কিন্তু আপনাদের। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমাদের স্বদিচ্ছার অভাব নেই।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ নেই। ইভিএমে ফল পরিবর্তন আদৌ সম্ভব নয়। আপনারা প্রতিটি বুথে এজেন্ট দেবেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই সেই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
সিইসি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। সকলের সমান সুযোগ থাকবে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোন পক্ষপাতমূলক নির্বাচন হবে না। খুলনায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে তিনি প্রার্থীদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.)। অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরুতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রতিটি বুথে সব প্রার্থীর এজেন্ট নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে হলে এজেন্ট দিতে হবে। পর্যবেক্ষক কিংবা সাংবাদিকরা যদি কেন্দ্রে সকলের এজেন্ট না পায় তাহলে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলতে পারে। এতে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এটা কখনই কাম্য নয়।
ইভিএম’এ যান্ত্রিক ত্রুটি যাতে না হয় এবং ভোট দেওয়ার সময় একজনের ইভিএম’র বাটন অন্যজন যাতে প্রেস করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার অনুরোধ করেন মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যেন প্রভাবিত না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখার আহবান জানান মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এম মাসুদুর রহমান ভুইয়া, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক বিপিএম (বার), খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, খুলনার পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান প্রমুখ। এসময় খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এবারের কেসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯জন। ভোট কেন্দ্র ২৮৯টি এবং ভোট কক্ষ থাকবে এক হাজার ৭৩২টি। ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ ও ১৬১ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ৩ হাজার ৫৬৭ পুলিশ, ৩০০ আর্মড পুলিশ ও ৪ হাজার ৬৫৭ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১২ জুন ভোটগ্রহণ করা হবে।