৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারে পদযাত্রা করেছে দেশের সংস্কৃতিকর্মীসহ সংস্কৃতিসেবীরা। ‘ভোট কেন্দ্রে সবাই যাব— আমার ভোট আমি দেব— মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেব’ শীর্ষক অবিরাম ে¯¬াগানে মুখরিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা—কর্মীরা এই আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, দেশের সর্বস্তরের ভোটার বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে অবশ্যই সচেতন করে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আসন্ন নির্বাচন বানচাল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ক্রমাগত হরতাল—অবরোধ—অসহযোগের নামে ভয়ংকর অপতৎপরতা শুরু করেছে।
যানবাহন—ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে। নির্বাচন প্রতিহত ও প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য— নির্বাচনকে দেশে—বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা, যা আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপশক্তির নির্বাচন বানচালের সকল অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে যে কোনো মূল্যে। সেজন্য ভোটারদের দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা আবশ্যক। ভোটদানের মাধ্যমে জয়ী করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে।
ইতোপূর্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে অবিলম্বে এসব সংঘাত, অগ্নিসন্ত্রাস, সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্র, যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আমলে না নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র পথ হলোÑ পারস্পরিক আলাপ—আলোচনা ও সমঝোতা। যেটি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশী—বিদেশী সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকার আহ্বানও জানানো হয়।
ফেসবুকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানা অপপ্রচার, ধর্মীয় উগ্রবাদ—মতাদর্শ ও গুজব ছড়িয়ে বিশেষ করে তরুণদের বিভ্রান্ত করে সন্ত্রাসবাদে প্রশিক্ষত ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মূলত এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ববিরোধী জামায়াত—হেফাজতের আশ্রয়ে পরিপুষ্ট। বিএনপি—জামায়াতের মদত ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাভাই, আনসার আল ইসলাম, হরকাতুল জিহাদসহ হিন্দাল শারক্বিয়ার মতো উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সন্ধানও মিলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি একটি উৎসবপ্রিয় সংস্কৃতি মনস্ক অসাম্প্রদায়িক জাতি। মূলত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় সমতার ভিত্তিতে জন্মগ্রহণ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ। যার উত্থান ও অভ্যুদয়ের পেছনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সুমহান ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, রবীন্দ্র—নজরুল—সুকান্ত সমৃদ্ধ হিন্দু—মুসলিম—বৌদ্ধ—খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠীসহ সকলের সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও পারস্পরিক ধর্মীয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি।
স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তি ও অপতৎপরতা সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে হাজার বছর ধরে চলমান বাঙালি শিল্প—সংস্কৃতির মাধ্যমে। চলমান দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্র, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা হিসেবে হরতাল—অবরোধসহ ব্যাপক সহিংসতা প্রতিরোধে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে বীর বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াবে বলেই প্রত্যাশা।