নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে ভূমিহীনমুক্ত এলাকার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে সদর উপজেলা। আগামী ৯ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য এলাকার সাথে যশোরে পাঁচ উপজেলার ১৮৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনকে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর উপহার হিসেবে বিতরণ করবেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৫৮ জনকে জমি ও ঘর দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলাটিকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে জেলার ৮টির মধ্যে ৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হবে।
সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে চতুর্থ পর্যায়ে (২য় ধাপ) ঘর ও ভূমি হস্তান্তর কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। এর আগে, চলতি বছরের ২২ মার্চ যশোরের শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর এই তিন উপজেলা ভূমিহীনমুক্ত এলাকার স্বীকৃতি পায়। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হলেও এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে কোনো ভূমিহীন পাওয়া যায়, দ্রুত তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার প্রধান। এজন্য যেখানেই সরকারের খাস জমি আছে, সেগুলো উদ্ধারের পর বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ হয়েছে।
এই পর্যন্ত জেলায় ঘর ও ভূমি পেয়েছেন দুই হাজার ৯৪ জন। আগামী ৯ আগস্ট চতুর্থ পর্যায়ে (২য় ধাপ) জমিসহ ঘর পাচ্ছে আরও ১৮৮ পরিবার। পরিবারগুলো ৪শ বর্গফুট আয়তনের সেমিপাকা ঘর, টানা বারান্দা, রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন পাবে। এছাড়া তারা বিনামূল্যে পাবে বিদ্যুৎসংযোগ। পুনর্বাসিতদের জন্যে রয়েছে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
এবার যে ১৮৮ টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, এর মধ্যে সদর উপজেলাতে ৫৮, অভয়নগরে ৯, মণিরামপুরে ৩৫, ঝিকরগাছায় ৪০ ও শার্শায় ৪৬টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি ঘর দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে সদর উপজেলাকে শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করবেন। বাকি ১৩০টি ঘর চার উপজেলার ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া জেলায় নির্মাণকাজ চলছে ২৫টি ঘরের। নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭৩টি। পরবর্তী পর্যায়ে এই ৯৮টি ঘরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না-এ সাহস বিশ্বে শুধু বাংলাদেশই দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু এ সাহসই দেখাননি বরং তিনি এটা করে দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। সেই পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, বিধবা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীসহ অনেক গৃহহীন আছেন যারা ঘরগুলো পেয়েছেন। এটি আনন্দের বিষয়।
তিনি জানান, জেলায় দুই হাজার ৫০৬ জনকে ভূমিহীন গৃহহীনের তালিকা করে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ঘর ও ভূমি পেয়েছে ২ হাজার ৯৪ জন। নতুন করে ঘর পাচ্ছে ১৮৮ জন। এদিন সদর উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত এলাকার স্বীকৃতি দিবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বাঘারপাড়া, কেশবপুর ও শার্শা উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে সদর উপজেলা দিয়ে জেলায় মোট ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা হবে চারটি। বাকি চার উপজেলাকেও দ্রুত স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও রাজস্ব) তুষার কুমার পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ, সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ।