জীব হিসেবে জন্ম গ্রহণ করা প্রত্যেকের মৃত্যু অবধারিত। কেউ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। কোরআনের একাধিক আয়াতে আল¬াহ তায়ালা মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে,
আর আল¬াহ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব—জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহুর্তকাল আগাতে বা পিছাতে পারে না। (সূরা নামল, (১৬), আয়াত, ৬১)
এই আয়াতে আল¬াহ তায়ালা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাহলো, তিনি যদি মানুষকে তাদের অত্যাচার—অনাচার, পাপাচারের কারণে পাকড়াও করতেন তবে পৃথিবীর বুকে কোনো প্রাণী রাখতেন না। তিনি তাদেরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। যাতে যারা তওবা করতে পারে, আর যারা অন্যায়কারী তাদের অন্যায় কাজের পরিপূর্ণতা লাভ করে। (ফাতহুল কাদীর)
মৃত্যু বিষয়ে পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল¬াহ তায়ালা বলেন, ‘পুণ্যময় ওই সত্ত্বা, যার হাতে রাজত্ব। তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। তিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?’ (সূরা মূলক, আয়াত, ১—২)।
অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনিই জীবন ও মরণ দান করেন এবং তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সূরা ইউনুস, ৫৬)
কোরআনের এসব আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, মৃত্যু নির্ধারিত এবং তা আল¬াহ তায়ালার নির্ধারিত সময়েই সংঘটিত হবে। এর আগে বা পরে কখনো কারো মৃত্যু হবে না। কারো নির্ধারিত সময়ের আগে তার মৃত্যু হবে না।
কেউ অল্প বয়সে, এক্সিডেন্ট বা ভুল চিকিৎসার কারণে মারা গেল— এমন মৃত্যুর ক্ষেত্রে সমাজে অকাল মৃত্যু শব্দ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এই শব্দটি পরিহার করা উচিত। কারণ, এমন কথা ইসলামী বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা আল¬াহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই ‘জন্ম—মৃত্যু’ নির্ধারণ করেছেন। সেই অনুপাতে মানুষের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। তাকদিরের লিখিত অনুপাতেই মানুষের রিজিক ও আয়ু দেওয়া হয়।
মৃত্যুর জন্য ছোট—বড়, যুবক—বৃদ্ধ কোনো সময় নির্দিষ্ট নয়। পৃথিবীতে মানুষ আগমনের ধারা—পরম্পরা আছে, যাওয়ার নয়। কেউ কেউ মায়ের গর্ভ থেকে দুনিয়াতে আগমন করে মৃত অবস্থায়। আবার কেউ শৈশবে, কেউ কৈশোরে, কেউ যৌবনে, কেউ বৃদ্ধাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এগুলো সবই আল¬াহর ইচ্ছায়। এখানে কারো কোনো হাত নেই।
কেউ ভুল চিকিৎসা, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে, পানিতে পড়ে কিংবা অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করলে এটাকে বলা যেতে পারে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু বা অল্প বয়সে মৃত্যু; অকাল মৃত্যু নয়।
ঈমান—আমল ঠিক থাকলে তো মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জান্নাতের পথ সুগম হয়। আল¬াহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে যায়, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছিয়ে যেতে পারে, আর না এগিয়ে আসতে পারে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত, ৩৪)