৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘ভুল অপারেশনে’ নিজের ক্লিনিকেই মারা গেলেন সেবিকা

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নিজের চাকরি করা ক্লিনিকেই ভুল অপারেশনে মৃত্যুবরণ করলেন সেবিকা স্বণালী খাতুন। মেহেরপুর জেলা শহরের ব্যক্তি মালিকানাধীন ‘ডা. রমেশ ক্লিনিকে’ এ ঘটনা ঘটে। স্বর্ণালী মেহেরপুর পৌর এলাকার হোটেল বাজার পাড়ার মৃত আদম শেখের মেয়ে এবং মেহেরপুর মল্লিকপাড়ার সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী। পরিবারের অভিযোগ, ওই ক্লিনিকে কর্মচারীর এনেসথিয়ার পর ম্যানেজার এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করেন। এরপর তার আর জ্ঞান ফেরেনি। ঢাকায় নেয়ার পথে সে মারা যায়। শনিবার বিকেলে তার লাশ মেহেরপুরে আসলে উত্তেজিত মানুষ ক্লিনিক ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে জেলা শহরের বিশিষ্টজনরা নিহতের পরিবারের সাথে আলাপ করে কুড়ি লাখ টাকায় রফা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, পরিবারটিকে ১৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে একটি পক্ষকে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে চারটি সিজারিয়ান কাজে সহায়তা করে স্বর্ণালী। এসময় এপেন্ডিসাইটিস ব্যথায় সে কাতর হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক তাকে অস্ত্রপচার করা হয়। অপারেশন শেষে পোস্ট অপারেটিভ বেডে নিতেই স্বর্নালী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ৩০ ঘন্টায় অবস্থার উন্নতি না হলে রমেশ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে ঢাকায় নেওয়ার পর সে মারা যায়।

নিহতের মামাতো ভাই রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বোনের অপারেশনের সময় ডাক্তার ছিলো না। হাসপাতালের কর্মচারী হাবিব এনেস্থিসিয়া করে আর ম্যানেজার শহিদুল অপারেশন করেছে। স্বর্নালীর স্বজনদের না জানিয়েই কোনরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া অস্ত্রপচার করা হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল পৌনে চারটায় স্বর্নালীর মরদেহ মেহেরপুর এসে পেঁৗছালে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ও ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানায়। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশের অনুরোধে মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন ও জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল মৃতের স্বজনদের নিয়ে আলোচনায় বসে এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মৃতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চুক্তিতে ঘটনার মীমাংসা করে বলে জানা গেছে।
রমেশ ক্লিনিক পাড়ার অনেকেই অভিযোগ করেন, ক্লিনিকের ম্যানেজার শহিদুল অধিকাংশ সময় সিজারিয়ান অপারেশন এবং এনেস্থেসিয়া করে থাকেন। গত কয়েকমাসে অপারেশন টেবিলেই পাঁচজন রোগি মারা গেছেন।

অস্ত্রপচার ও পরবর্তী ঘটনা পরিক্রমাসহ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডা. রমেশ ক্লিনিকের ম্যানেজার শহিদুল ইসলামকে বার বার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। ক্লিনিকে গেলে বলা হয় তিনি বাইরে আছেন।

২৫০ বেডের মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. জমির মো: হাসিবুস সাত্তার বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের সময়েই মূলত রোগী কোমায় চলে যেয়ে থাকতে পারে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কৃত্রিম শ্বাস—প্রশ্বাসের মাধ্যমে স্বর্নালীর ফুসফুসটি সচল রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শুক্রবার দিবাগত রাত চারটার সময় রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়।’ তিনি আরও জানান, মেহেরপুরে হাতে গোনা দু’তিনটি বাদে প্রতিটি ক্লিনিকই অতি নিম্নমানের।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে আমি শুনেছি, কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মেহেরপুর সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইন—শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলাম। ঘটনার দিন থেকেই পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে অভিযোগ দিতে, কিন্তু তারা কোন অভিযোগ দেয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্লিনিক মালিক ও নিহতের পরিবারের মধ্যে আর্থিক লেনদেনে নিষ্পত্তি হয়েছে বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা শুনেছেন বলে জানান।

পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুলও বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলতে চাননি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram