নিজস্ব প্রতিবেদক : সন্ধ্যা রাত। জনবহুল সড়কের ফুটপাতে সাত যুবক তাড়া করে একজনকে মারপিট করছে। দু’জনের হাতে চাকু। তারা এলোপাতাড়ি ছুরি চালিয়ে জখম করছে। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে যুবকটি পড়ে যাওয়ার পর পালিয়ে গেলো হামলাকারী যুবকরা।
এরপর পথচারীরা ছুরিকাহত ওই যুবককে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সন্ত্রাসী হাসিব, দিলু, পিচ্চি রাজা, সাকলাইন, সুমন, দিপুসহ আরো কয়েকজনকে।
সন্ত্রাসী হাসিবের ছুরিকাঘাতে রিপনের মৃত্যু হয়। হাসিব সন্ত্রাসী শিপলু গ্রুপের সদস্য।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে যশোর শহরের মুজিব সড়কের রেলগেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাত যুবক যাকে মারছিলেন তার নাম রিপন হোসেন (৩০)। তার বাড়ি শহরের খড়কি কবরস্থান এলাকায়।
তিনি পেশায় একজন লেদমিস্ত্রী হলেও থাকতেন খড়কির সন্ত্রাসী ভুট্টো গ্রুপের সাথে। সন্ত্রাসী ভুট্টো ও সন্ত্রাসী শিপলুর দু’টি গ্রুপই যশোর সদর আসনের এমপি’র ছাত্রছায়ায় থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বলে অভিযোগ।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রিপনকে যারা হত্যা করেছে তারা এলাকার চিহ্নিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেনি নিহতের পরিবার। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যশোর পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগনেতাসহ পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজত নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, চার ভাইবোনের মধ্যে রিপন তৃতীয়। তিনি যশোর রেলস্টেশন এলাকার লেদ কারখানাতে কাজ করতেন। ঘটনার দিন বিকালে তার স্ত্রী ও আট মাস বয়সী সন্তানকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে বাড়িতে আসেন। এরপর সন্ধ্যায় শহরে বের হন। রাত আটটার দিকে যশোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন রিপন।
শহরের রেলগেট এলাকায় পেঁৗছালে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিত ছুরিকাঘাত করে তাকে জখম করে। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে কারবালা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে শহরের খড়কি এলাকায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। বাড়ির ভিতরে চেয়ারে বসে রিপনের মা রূপবান বেগম শোকে মুহ্যমান। প্রতিবেশী ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘তার ছেলে অনেক ভালো। আগে রাজনীতি করলেও সন্তান হওয়ার পরে সে আর রাজনীতি করতো না। লেদে কাজ করেই সংসার চালাতো। সোমবার হাসি মুখে ভাত খেয়ে সন্ধ্যায় বাইরে গেল। রাতে শুনলাম আমার ছেলেটা মার্ডার হয়েছে। সে হাসপাতালে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে রিপন এলাকার মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাকের সাথে রিক্সায় চড়ে রেলগেট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিল। এ সময় সন্ত্রাসীরা দু’টি ইজিবাইকে চড়ে মুজিব সড়কে অবস্থান নেয়।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাহাজান কবীর শিপলুর ক্যাডাররা এই হামলা চালায়। এ সময় হাসিব, দিলু, পিচ্চি রাজা, সাকলাইন, সুমন, দিপুসহ আরো কয়েকজন ছিল। সন্ত্রাসী হাসিবের ছুরিকাঘাতে রিপনের মৃত্যু হয়। হামলায় বিপুল ও মুস্তাক আহত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খড়কি এলাকাতে রাজনীতি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী ভুট্টো ও সন্ত্রাসী শিপলুর দু’টি গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জের ধরে শিপলুর ক্যাডারদের হাতে প্রাণ দিলেন রিপন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছিলো। আবার সবাইকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে।