২০শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে ৩৬টি ট্রাক
ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা: বেনাপোলে আটকা তৈরি পোশাক বোঝাই ৩৬ ট্রাক

বেনাপোল প্রতিনিধি : বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে তৈরি পোশাক আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে রবিবার সকাল থেকে কোনও পণ্যের চালান ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে ৩৬টি ট্রাক। এসব পণ্যের রফতানি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও পণ্যের চালানগুলো বেনাপোল থেকে ফিরিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দিকে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কোন কোনও প্রতিষ্ঠান। এর আগে শনিবার রাতে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।

রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। এতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা ক্ষতির মুখে পড়বে। বেনাপোল স্থলবন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য ভারতে পাঠাতে দ্বিগুণ খরচ হবে। একইসঙ্গে পণ্য পৌঁছাতেও বেশি সময় লেগে যাবে। এতে ক্রয়াদেশ কমে যাবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিলো। যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি করেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানি করেছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার পণ্য। যেসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছে, তার মধ্যে ভারত একটি। যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের মতো পোশাকপণ্য স্থলপথেই রফতানি হয়। ফলে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা এই খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

শনিবার রাতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর এক বিবৃতিতে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস/তৈরি পোশাক পণ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় ৩৬টি গার্মেন্টস পণ্যবোঝাই বাংলাদেশি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে। নিষেধাজ্ঞার আদেশে বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস/তৈরি পোশাক পণ্যসমূহ শুধু কলকাতা সমুদ্রপথে আমদানি করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যেসব পণ্যের এলসি/টিটি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে সেসব পণ্য যাতে আমদানি করা যায়, তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বেনাপোলের দুজন রফতানিকারক জানান, স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রফতানি বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে থাকি কলকাতায়। সেটিও বন্ধ হয়ে গেলো। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে আমরা তা পারবো না। বেনাপোল দিয়ে এক ট্রাক তৈরি পোশাক কলকাতায় পৌঁছাতে সব মিলিয়ে ছয় লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যেই পণ্যের চালান গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সেখানে চট্টগ্রাম নৌপথে এক ট্রাক পণ্য কলকাতায় পাঠাতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এতে করে ক্রয়াদেশ কমে যাবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‌‘ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। স্থলপথে এসব পণ্য রফতানিতে খরচ অনেক কম হতো। কিন্তু সমুদ্র ও বিমানপথে এসব পণ্য রফতানিতে খরচ অনেক বেশি পড়বে। এতে অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়বেন।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয় ভারতে। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেন। এই পথে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল, টিস্যু, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।’

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি আমরা পাইনি। পত্রপত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সব পণ্য রফতানি হয়েছে। তবে রবিবার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রফতানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোনও পণ্য রফতানি হয়নি। বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি ৩০-৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram