মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর ও মাসুদ তাজ, অভয়নগর : ভবদহ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচপ্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। অভয়নগরের শ্রী নদীর উপর অবস্থিত ভবদহ স্লুইচগেটে পাম্প স্থাপন প্রকল্পে আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ৩৫ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি সেচযন্ত্র বসানো হয়েছে। যা দিয়ে প্রতিদিন পানি নিঃস্কাশন করা হচ্ছে। এই পানি নিস্কাশনের ফলে জলাবদ্ধতা দূর হওয়ার পাশাপাশি গোটা এলাকা বোরো আবাদের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে এই পাম্প স্থাপন ও সেচপ্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইচ গেটে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি যৌথভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বাস্তবায়নের লক্ষে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভবদহ সমস্যা বহু বছরের সমস্যা। এর আগে ১৯৬১, ১৯৮০, ২০০১ ও ২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ভবদহপাড়ের মানুষের গ্রুপিংয়ের কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। চলতি বোরো মৌসুমে ভবদহ এলাকায় ফসল হচ্ছে। আগামীতে শতভাগ এলাকায় ফসল উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ভবদহ স্লুইস গেটের উত্তরের ২৭ বিলের পানি প্রবাহ না থাকায় মানুষ দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার শিকার। আশাকরা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই এর স্থানীয় সমাধান করা হবে।
স্থানীয় প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী এলাকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ভবদহ পানি নিরসন কমিটির আহবায়ক এনামুল হক বাবুল স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে, বিল কেদারিয়া ৪ ভেন্ট স্লুইচগেটের দক্ষিণ পাশ দিয়ে মশিয়াহাটী বেদভিটা খাল ও সীমানা খাল গভীরভাবে খনন, বেদভিটা বালিয়া খাল খনন, মশিয়াহাটী ব্রিজের নিচে বাঁধ অপসারণ, টেকা ব্রিজ থেকে হেলারঘাট মহাশ্মশান পর্যন্ত গভীর ও চওড়া করে মুক্তেশ্বরী নদী খনন, ভবদহ স্লুইচগেট থেকে ডানে খর্ণিয়া পর্যন্ত শ্রী নদী খনন, মুক্তেশ্বরী নদী সম্পূর্ণ অংশ সংস্কার, আমডাঙ্গা খালে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন, টেকা ব্রিজে চওড়া করে নদী খনন, ভবদহ স্লুইচগেটের ২১ ভেন্টের সামনে ক্রাশ বাঁধ নির্মাণ ও সেচ পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ভবদহের জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনকল্পে ২১ ভেন্ট স্লুইচ গেটে ৭৫ হর্সপাওয়ারের চারটি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে একই হর্সপাওয়ারের আরও ছয়টি পাম্প স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিএডিসির সেচপ্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১৬টি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ ৯০ শতাংশ জমিতে এবার চাষাবাদ করা সম্ভব হবে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাকিস্তান আমল থেকেই বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে। টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সেটি স্থানীয়দের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। আমি ২০১৯ সালে ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করেছিলাম। তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সমস্যা সমাধানের। আমি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রস্তাবিত দাবি নিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, দাবির মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন। বাকিগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এনামুল হক বাবুল, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন, মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শামীম হাসান, ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল, সানা আব্দুল মান্নান, শেখর চন্দ্র, হাফিজুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জি. হাসানুজ্জামান কাজলসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, অভয়নগরের শ্রী নদীর উপর অবস্থিত ভবদহ স্লুইচগেটে পাম্প স্থাপন প্রকল্পে গত ২২ জানুয়ারি থেকে আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ৩৫ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি সেচযন্ত্র বসানো হয়েছে। যা দিয়ে প্রতিদিন পানি নিঃস্কাশন করা হচ্ছে। যেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হলো।
এছাড়াও এই প্রকল্পে ভবদহ ২১ ভেন্ট (কপাট) স্লুইচগেটের ১৪টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে অপর পাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে। প্রায় ২০০ মিটার দূরে শ্রী নদীর অপর শাখার উপর ৯ ভেন্ট স্লুইচগেট রয়েছে। স্লুইচগেটের উপর ৫টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো রয়েছে। সেচযন্ত্র দিয়ে নদীর পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিলের পানি সরে যাচ্ছে।