২৬শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ভবদহের দুই বিলে সোনালী হাতছানি
ভবদহের দুই বিলে সোনালী হাতছানি

মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভবদহ অঞ্চলের দু’টি বিলে সোনালী ফসলের হাতছানি দিচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে ভবদহের বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে। বিল দু’টিতে দিগšত্মজোড়া মাঠে কেবল বোরো ধানের সবুজের সমারোহ। ভবদহের যাতাকলে পিষ্ট বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ার কৃষকদের উদ্যোগে বিল হতে পানি নিষ্কাশনের কারণে এই সবুজ বিপস্নবের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই বিলের কৃষকরা নিজেরা সংগঠিত হয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন করে এই সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন বলে দাবি তাদের।


স্থানীয় চাষীরা জানান , ভবদহে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ার পোড় খাওয়া কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে সংগঠিত হন। তাদের সংগৃহীত প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবো’র (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভেড়িবাঁধ সংস্কার করে বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পেরেশন) সহায়তায় সেচ পাম্প দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন করেন। এরপর এই বিলে চলতি বোরো মৌসুমে শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা হাজারো পরিবারের স্বপ্ন সবুজ ধানের দোলায় দুলছে।


সূত্র জানায়, ২০২০ সালের শুরম্নতে বিল কপালিয়া হতে পানি সরাতে স্থানীয় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ূর রহমান, কালিপদ মন্ডল, পরিতোষ বিশ্বাসসহ আরও অনেকে বিলপাড়ের কৃষকদের সংগঠিত করেন। তাদের উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেচ পাম্প স্থাপন করে বিল থেকে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরম্ন হয়। শুরম্নতে ভাল ফল না হলেও পরবর্তীতে সুফল আসতে শুরম্ন করে। প্রতি বছর বিল কপালিয়ায় বোরো আবাদ বাড়তে থাকে।

এরপর পাউবো এই ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিএডিসি’র (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) কাছে সেচ পাম্প কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আবেদন করে। বিএডিসি আবেদনের প্রেড়্গেিত ভবদহ ¯স্নুইচ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ৩০ এইসপি’র (হর্সপাওয়ার) ২০ টি পাম্প সরবরাহ করে। পরে পাউবো উচ্চড়্গমতা সম্পন্ন আরও ৪টি পাম্প সংযুক্ত করে। আরও পাম্প কিনতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্র¯ত্মাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানাগেছে।


এরপর বিল কেদারিয়ায় বোরো আবাদ করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারম্নক হুসাইনের নেতৃত্বে কৃষকরা সংগঠিত হন। প্রতি কৃষক দুই হাজার টাকা দিয়ে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে লখাইডাঙ্গা হতে টেকারগাট ব্রিজ পর্যšত্ম পাউবো’র ভেড়িবাঁধ সংস্কার করেন। এতে বিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টেকা নদী হতে নোনা পানি উত্তোলন বন্ধ হয়। এরপর বিএডিসির সহাতায় অধিক ড়্গমতা সম্পন্ন পাম্প দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরম্ন করা হয়।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যার সুফল এবার পেতে যাচ্ছেন তারা। বিল কেদারিয়ায় পানি নিস্কাশনে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন হয়। তাদের তত্ত্বাবধায়নে চলে পাউবো’র বাঁধ সংস্কার কাজ। মাটি কাটতে স্থানীয় সংসদ সদস্য পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপিও তাদের সাড়ে তিন লাখ দিয়েছিলেন।
কমিটির অন্যতম নেতা টিটো জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারম্নক হুসাইন তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হননি। তারপরও তার নেতৃত্বে এই সেচ কার্যক্রম চলে। কমিটির আরেক সদস্য ইছহাক আলী গাজী বলেন, বিলের মাঝের ২০ হেক্টর জমি ছাড়া প্রায় সব জমিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ধানের আবাদ হয়েছে।


মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলা চলতি বোরো মৌসুমে ২৮ হাজার ১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গত অর্থ বছরে চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। ভবদহ প্রভাবিত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের (কুলটিয়া, মনোহরপুর, খানপুর, নেহালপুর, হরিদাসকাটি ও দূর্বাাঙ্গা) বিল কপালিয়া, বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, ডুমুর বিল, বিল আড়পাতা, বিল শালিখা বিল সম্বলডাঙ্গা, বিল হরিণাসহ ২৬টি বিলের মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ার অধিকাংশ জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। বিল কেদারিয়ার কুলটিয়া ও নেহালপুর অংশের মোট ৫৮০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৯৫ হেক্টর জমিতে বোরা আবাদ হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে আবাদ হয়েছিল মাত্র ২৪০ হেক্টর জমিতে। বিল কপালিয়ার ৯৭৮ হেক্টর জমির মধ্যে এবার ৬০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। যেখানে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে চাষ হয়েছিল ৪২১ হেক্টর জমিতে।

এ ব্যাপারে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, তাদের সেচ কার্যক্রমের কারণেই এবার ভবদহ এলাকায় বোরো আবাদ বেড়েছে। চাষীরা সরকার গৃহিত পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে। যদিও পাউবোর এ দাবি মানতে নারাজ বিল কেদারিয়া ও বিপ্লব হতে চলেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram