১২ই ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোরে সুলভ ঈদ বাজারে অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রি করেছে ‘ব্যাক বেঞ্চার’
‘ব্যাক বেঞ্চারের’ ঈদ বাজারে অর্ধেক দামে পণ্য কিনলো ৩৫০ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুলভ ঈদ বাজারে অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রি করেছে সামাজিক সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’। এই বাজারে চাল, আটা, সয়াবিন তেল, সেমাই চিনি, দুধ, মুরগির মাংসসহ ৮২৫টাকা মূল্যের ৯টি পণ্য ৪০০ টাকায় ক্রয় করেছে ৩৫০টি পরিবার।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের পাশে বসে অস্থায়ী এই বাজার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের শিড়্গার্থীদের নিয়ে গড়া সামাজিক সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ এই ঈদ বাজারের আয়োজন করে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। সদস্যরা কেউ চাকরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এই সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে চলে নানামুখী স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকান্ড। সংগঠনটি মূলত দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কর্মকা- করে আসছেন। করোনাকালে সংগঠনটি অক্সিজেন সেবা, খাদ্যসামগ্রী বিতরণের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন।

 

স্বেচ্ছাসেবার ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবে সংগঠনের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার। এজন্য তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে যারা সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের জন্য আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলড়্গে ঈদ বাজারের ব্যবস্থা করেন। এরপর যশোর শহর ও শহরতলী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জরিপ চালিয়ে সাড়ে তিনশ’ জন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে শনাক্ত করে সংগঠনটি। তাদেরকে ঈদে দরকারি এমন ৮২৭ টাকা মূল্যের ৯টি পণ্য অর্ধেক মূল্যের চেয়ে কমে মাত্র ৪০০টাকায় প্রদান করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে এই ঈদ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আরএনরোডস্থ নতুন বাজার প্রাঙ্গনে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। বিভিন্ন পণ্যের স্টলও রয়েছে। ওই সব স্টলের টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পণ্য। ক্যাশ কাউন্টারে পণ্যের দাম পরিশোধ করে একটি ¯িস্নপ নিয়ে লাইন থেকে একজন একজন করে স্টলে গিয়ে পছন্দের পণ্য ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন।

মনিহার এলাকা থেকে বাজার করতে আসা প্রতিবন্ধী আলমগীর হোসেন জানান, রিকসা চালিয়ে সংসার চালাই। জিনিসপত্রের এখন যে দাম; সংসার চালানো কঠিন। এর মধ্যে রোজা ঈদ উপলক্ষে সকল পণ্যের দাম আরোও বেড়েছে।  চিন্তায় ছিলাম ঈদে কিভাবে কী করবো। এই বাজার থেকে অর্ধেক দামে জিনিসপত্র কিনতে পেরে ঈদের আগে ঈদের আনন্দ পেলাম।

আমেনা খাতুন শহরের একটি বাসা বাড়িতে কাজ করেন। তিনিও এসেছেন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ সূলভ ঈদবাজারে। তিনি বলেন, ‘বাজারে যে জিনিসের দাম বাড়ছে। কম দামে পণ্য পেয়ে আমার মতো গরিব মানুষের অনেক উপকার হইছে। এই সংগঠনের মতো আরও দুটো সংগঠন হলে এই অঞ্চলের গরিব মধ্যবিত্তদের খুব উপকার হতো।’

আমেনার মতো এসেছেন আরশাদ গাজীও। ষাটোর্ধ এই রিকসা চালক বলেন, ‘নয় ধরনের জিনিস কিনেছি। এত কম দামে বাজার পাব স্বপ্নেও ভাবিনি। এই ৯টি পণ্যের বাজার দর ৮শ’ টাকার বেশি। তবে আমি কিনেছি ৪০০ শ’ টাকায়। পোলাও চাল, তেল মুরগিসহ ৯টি পণ্য রয়েছে। এমন কাজের জন্য এই সংগঠনকে দোয়া ছাড়া কিছু করার নাই আমাদের।’

সংগঠনটির সভাপতি জাকিউল ইসলাম পিংকু বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি; এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কষ্টে আছে। তারা কষ্টে থাকলেও কারোও কাছে হাত পাততে পারে না। তাদের জন্য আমাদের এই বাজার। তারা যেন ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারে সেই জন্য আমাদের এই আয়োজন।’

সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহনেওয়াজ আনোয়ার লেনিন বলেন, ‘বাজারমূল্যের যে অর্ধেকদামে আমরা ৯টি পণ্য বিক্রয় করছি। ঈদের দিন দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা দ্রব্যমূল্যের কারণে কাঙ্ক্ষিত ঈদবাজার করতে পারে না। পোলাও মাংস খেতে পারে না। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা মুরগির মাংস, পোলাও চালসহ দরকারি ৯টি পণ্য পর্যপ্ত পরিমাণে তাদের কাছে কমমূল্যে বিক্রয় করছি। যাতে তারা আনন্দের সঙ্গে ঈদটা করতে পারে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমরা নিজেদের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে একবেলার খাবারের আয়োজন শুরু করি। পরে অনেক ভালো মনের মানুষ আমাদের সংগঠনটিতে শরিক হচ্ছেন। এছাড়া অনেক দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিরা। সিনিয়র আইনজীবী শহীদ আনোয়ার জানান, ‘ব্যাক বেঞ্চার’ দীর্ঘদিন ধরে এই আরএন রোড এলাকায় ভালো কাজ করে আসছে। এখন তো যুবকদের ভালো কাজের সঙ্গে দেখা মিলে না; যে যার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু এসব যুবকরা নিজের সময় শ্রম অর্থ দিয়ে সমাজের হতদরিদ্র মানুষের জন্য যে কাজ করছে সেটা সমাজের দৃষ্টান্ত। এদের মতো পাড়ায় পাড়ায় এমন সংগঠন গড়ে উঠলে সমাজে এতো বৈষম্য থাকতো না। ধনি গরিবের মধ্যে এতো ভেদাভেদ দূরত্ব সৃষ্টি হতো না।’

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram