ফকির আক্তারম্নল আলম : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যবসা করার জন্য ঋণ বিতরণের সময় বন্ধকী হিসেবে সম্পদ মর্টগেজ নেয়। সমস্যা দেখা দেয় যখন কোন ঋণগ্রহীতার অকাল মৃত্যু হয়। একদিকে যেমন চলমান ব্যবসা বন্ধ হয়ে পারিবারিক অসচ্ছলতা দেখা দেয়, অপরদিকে বন্ধকী সম্পত্তি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বেহাত হয়ে যায়। সমস্যা দীর্ঘদিনের, কিন্তু কেউ এদিকে নজর দিয়েছে এমন নজির নেই।
ব্যবসা ভালো চলার সময় ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। কিন্তু যখন গ্রাহকের আকস্মিক মৃত্যু হয় তখন সবকিছু উল্টে যায়। প্রথমত ব্যাংক তার পাওনা আদায়ে তৎপর হয়, কিন্তু উত্তরাধিকারিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে ব্যাংক ও গ্রাহকের উত্তরাধিকার কেউই স্ব¯িত্মতে থাকতে পারে না। তখন টান পড়ে বন্ধকী সম্পত্তির উপর। এক্ষেত্রে বিকল্প চিšত্মা করা যেতে পারে। যদি ঋণ বিতরণের সময় একটা রিক্স ফান্ড জাতীয় কিছু করা যায় যাতে গ্রাহক ও ব্যাংক যৌথভাবে চাঁদা প্রদান করবে, একটা তহবিল গঠন করবে যাতে আপদকালীন সময়ে তা থেকে আকস্মিক মৃত্যুর শিকার গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। এতে একদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় নিশ্চিত হবে, তেমনি গ্রাহকের পরিবার তাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারবে, অসহায় অবস্থায় পড়বে না। প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউসিবির এমপস্নয়ি হাউজ বিল্ডিং লোনের ক্ষেত্রে এরকম একটা পদ্ধতি চালু আছে। সেখানে ঋণ গ্রহীতা কেউ মারা গেলে ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে ঋণটি পরিশোধ করা হয়, উত্তরাধিকারদের কোন সমস্যা পোহাতে হয় না।
অকাল মৃত্যুর শিকার বেশ কয়েক জন গ্রাহকের পরিবারের দুরাবস্থা স্বচক্ষে দেখেছি, তারা অকুল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন একদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে, অপরদিকে ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় চাপায়। সšত্মানহীন একজন গ্রাহক মৃত্যুবরণ করার পর তার ভাইবোনেরা উত্তরাধিকারের দাবি নিয়ে হাজির, ভাইয়ের সম্পদ দখলের জন্য। অথচ ভাইয়ের অসুস্থতার সময় একটা কানাকড়ি দিয়েও কেউ সহায়তা করেনি, এমনকি সামান্য খোঁজখবর পর্যšত্ম করেনি। অথচ ভাইয়ের মৃত্যুর পর সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বাড়ি ছাড়ার সকল ব্যবস্থা নিয়েছে। বিধবা স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়ি হারানোর শোকেও কাতর হয়ে পড়েছে। এধরনের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত নয় কি?
কাজটা খুব কঠিন কিছু নয়। দরকার এ নিয়ে চিšত্মা ভাবনা করা, এবং একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এধরনের উদ্যোগ নিতে পারে, তাতে সবার উপকার হবে।
লেখক : জোনাল হেড, খুলনা ও ফরিদপুর জোন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লি. (ইউসিবিএল)