১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোর শিক্ষাবোর্ড
বিষয় কোড ভুল : পরীক্ষার মাঝেই বিড়ম্বনায় হাজার হাজার এসএসসি পরীক্ষার্থী

তহীদ মনি : শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন পৌরনীতির। আর প্রবেশপত্রে বিষয় কোড পেয়েছেন অর্থনীতি। হিন্দু ধর্ম পরীক্ষা দিতে যেয়ে দেখছেন তার কোড ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা। প্রবেশপত্রে বিষয়কোর্ড সংশোধন করতে করতে ক্লান্ত যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা কর্মচারিরা। প্রতিদিন শত শত আবেদন জমা পড়ছে। পরীক্ষা চলামান থাকায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ তড়িৎ সংশোধন করে দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বছর আগে করনোকালীন লকডাউনের মাঝে রেজিস্টেশন হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। ওই সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কম্পিউটার সহকারীরা রেজিস্ট্রেশন করান। তাদের সেই ভুল বহন করছেন শিক্ষার্থীরা।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চলতি এসএসসি পরীক্ষায় বিষয় কোড ভুলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের জয়া রাণী দাসের প্রবেশ পত্রে এবার বিষয় কোড এসেছে ১১১, কোডটি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের। হিন্দু ধর্মাবম্বী হওয়ায় তিনি ওই বিষয়েই প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার কোড হওয়ার কথা ১১২। এখন কোড পরিবর্তন না হলে তার ১১১ অর্থাৎ ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হবে, নচেৎ ফল আসবে না।

নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইশরাত জাহান রিক্তার প্রবেশপত্রে একটি বিষয় কোড ১৪০ (পৌরনীতি)। দুই বছর ধরে তিনি পড়েছেন অর্থনীতি, যার কোড ১৪১। রিক্তা বা জয়ার মতো হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর এ রকম বিষয় কোড ভুল এসেছে বা ভুল বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন ৯ম শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করতে হয়। বর্তমানে যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তারা ২০২১ সালে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে। সে সময় তাদের বিষয়গুলি নির্ধারিত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ওই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডে চূড়ান্ত তথ্য প্রেরণের পূর্বে শিক্ষার্থীদের প্রিন্ট আউট দেখাবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রিন্ট কপি দেখে স্বাক্ষর করে স্কুলে জমা দেবে। তাছাড়া প্রবেশপত্র প্রদানের পূর্বেও বিষয় ও বিষয় কোড মিলিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।

খুলনার লায়নস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বাদশা খান জানান, যদি কোনো প্রধান শিক্ষক তার শ্রেণি শিক্ষক ও কেরাণি দিয়ে এ কাজটি না করিয়ে ওপর নির্ভর করেন তাহলে এমন ভুল হতেই পারে।
তবে বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোন শিক্ষার্থীর এ ধরনের সমস্যা হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত আবেদন করতে হবে। বোর্ড দ্রুত সংশোধন করবে। কোন পরীক্ষার্থী সমস্যায় পড়বে না।

কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীরা আবেদনটি বিদ্যালয়ের সুপারিশসহ শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছাতে পারছে। প্রতিটি বিষয় কোড পরিবর্তনে ফি জমা দিতে হচ্ছে ৮শ টাকা। তাছাড়া শিক্ষা বোর্ডে আসা যাওয়া খরচসহ নানা খরচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বীকার জানান, বোর্ড সুযোগ না দিলে ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তিনি অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার পরিচয় দেন না। অথবা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না তখন শিক্ষার্থী অভিভাককে চরম মূল্য দিতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়িত্বে অবহেলার জন্যে বোর্ড ও শিক্ষার্থী সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এরকম ভুল কেনো হচ্ছে এটি জানতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. দিল আরা চৌধুরী জানান, আমরা সাধারণত শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে সংশোধনের জন্যে প্রিন্ট কপি দেই, হয়তো ওই শিক্ষার্থী মনোযোগের সাথে সেটা দেখেনি অথবা ১১০ বা ১১১ কোড পাশাপাশি থাকে ভুলক্রমে অনলাইন পূরণের সময় চাপ পড়েছে। তবে আমরা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে সংশোধনের চেষ্টা করছি।

নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, তার বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থীর এ সমস্যা হয়েছে। ওই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, তবে শিক্ষার্থী, শ্রেণি শিক্ষক বা কেরাণি কারো না কারো ভুল ছিল, দায়িত্বে থাকা প্রধানও এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

সাতক্ষীরা শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিন উদ্দীন জানান, তার বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষার্থীর এরকম বিভিন্ন বিষয় কোড ভুল এসেছে, ইতোমধ্যে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে পরিবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেননি। বিদ্যালয় পরে এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেবে। কেনো এমন ভুল জানতে চাইলে তিনি জানান, অতিমারী করোনার কারণে ওই সময় ক্লাস বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদেরকে ঠিক মতো পাওয়া যায়নি আর যারা এটার দায়িত্বে ছিলেন তারাও হয়তো গাফিলতি করেছেন। তবে শিক্ষা বোর্ড সংশোধনের সুযোগ না দিলে কী হতো এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে চান।

এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সংশোধন করতে করতে তিনি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাঁফিয়ে উঠছেন। এত ভুল যে সংশোধনের সুযোগ না দিলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে এই ভুলের জন্যে তিনি করোনার কারণ যেমন উল্লেখ করেন তেমনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দায়িত্ব কর্তব্য সচেতনতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, আগামীতে রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে আরো সচেতন করার উদ্যোগ নেবেন।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন আহম্মেদ বিষয় কোডের ভুলটি স্বীকার করে জানান, আবেদন আসলে তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শকের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিক করে সমাধান দেওয়া হচ্ছে । তিনি স্বীকার করেন অনেক শিক্ষার্থীর এ জাতীয় বিষয় পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram