ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নৃশংস বর্বর হামলাসহ নিষ্ঠুরতা চলছেই। প্রতিদিন সেখানে নিহত হচ্ছেন অসহায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশু। স্থল ও আকাশপথে অব্যাহত হামলার পাশাপাশি সর্বশেষ ইসরাইল গাজায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষুধাকে। গাজায় প্রবেশের জন্য বিদেশের ত্রাণ সহায়তার পথগুলো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। মিসর থেকে সীমিত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী যেটুকু যাচ্ছে, তা সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো। ভয়াবহ হামলা ও ত্রাণ সংকটে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন গাজাবাসী। এর শেষ কবে হবে তা জানে না কেউ। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এক্ষেত্রে প্রায় নীরব দর্শক। জাতিসংঘ পর্যন্ত অসহায়।
সে অবস্থায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনতিবিলম্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী ঐক্য সংস্থার জোট ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ওআইসির সদস্য দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকায় নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেনÑ যেটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা বন্ধের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। উলে¬খ্য, ইসরাইল—হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে কাতার।
দীর্ঘদিন থেকে গাজাবাসী এক বিচ্ছিন্ন ভূখে— প্রায় বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দুঃখজনক হলো, গাজার ভয়াবহ এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য মাঝে—মধ্যে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং কতিপয় দেশ সাহায্য—সহানুভূতি—সমবেদনা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আদৌ কোনো হেলদোল নেই। পরিবর্তে তারা পূর্ণ সমর্থন নিয়ে বর্বর ও স্বেচ্ছাচারী ইহুদিবাদী নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশে অস্ত্রসহ সবরকম সাহায্য—সহযোগিতা—সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য রাশিয়া, চীন, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন তথা গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে হামাসের আকস্মিক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সর্বশক্তি নিয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা ভূখণ্ডে সর্বাত্মক বর্বর হামলার পরপরই স্বাধীন ফিলিস্তিন ও গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছেন।
গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধসহ চরম মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে উপস্থাপন করেছেন পাঁচ দফা সুপারিশ। যার মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের একতরফা জঘন্য হামলা ও যুদ্ধ বন্ধসহ যুদ্ধবিরতি। কেননা, এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আটকে পড়া গাজাবাসীদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের অবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সরবরাহের জন্য একটি মানবিক করিডর স্থাপন। তৃতীয়ত, নিরপরাধ বেসামরিক ব্যক্তি নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা। চতুর্থত, জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়াট্রেট ম্যাপ পুনরায় পর্যালোচনাসহ দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ।
পঞ্চমত, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আমরা ১৯৬৭ সালে সীমান্তের ভিত্তিতে এবং আল—কুদস আল শরীফকে রাজধানী করে দ্বি—রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের আÍনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং এর বাস্তবায়ন চাই। ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্ব তথা মুসলিম উম্মাহ এক্ষেত্রে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী প¬্যাটফর্ম হিসেবে অবদান রাখতে পারে।