স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের চিকিৎসকরা বিশ্বের অন্য দেশের চিকিৎসকদের তুলনায় মেধায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। উপযুক্ত কাজের পরিবেশ না পাওয়ায় তাদের মেধা প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক দশক আগে ভুটানের নাগরিক কারমা দেমার নাকের গহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভুটানে এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় কারমা গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানেও আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় মাস দুই আগে ভর্তি হন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প¬াস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এখানে গত মাসে সফল অস্ত্রোপচারের পর ভুটানি তরুণী এখন প্রায় সুস্থ হয়ে অপেক্ষায় আছেন নিজ দেশে ফেরার। দেশের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মেয়েটিকে বর্তমান অবস্থায় আনা সম্ভব হয়েছে। যদিও তার চিকিৎসা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। চিকিৎসা শেষে তার নাক আরও সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশি¬ষ্টরা। এই চিকিৎসার সাফল্য নিঃসন্দেহে দেশের চিকিৎসকদের সক্ষমতাকেই প্রমাণ করে। এই ভুটানি তরুণীই প্রথম রোগী, যিনি চিকিৎসা সেবা নিতে মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। তার সুকিচিৎসা নিশ্চিত করতে পারার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণার ও গর্বের।
এমন আরও কিছু বিরল সাফল্য রয়েছে দেশের চিকিৎসকদের। অপারেশনের মাধ্যমে তারা জোড়া লাগানো শিশুর মাথা সফলভাবে আলাদা করতে পেরেছেন। যদিও এক্ষেত্রে অন্য দেশের চিকিৎসকও ছিল। তারপরও দেশের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম প্রশংসার দাবিদার। গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে সফলভাবে লিভার বা যকৃৎ প্রতিস্থাপনের বিষয়টিও চিকিৎসা জগতে প্রায় বিপ¬বতুল্য বলা চলে। এটি ছিল একটি গিভিং লিভার ট্রান্সপ¬ান্টেশন। যার অর্থ নিকটাÍীয় সম্পর্কিত সুস্থ দাতার লিভার আংশিক কেটে নিয়ে অন্য রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন। অবশ্য এর বাইরেও লিভার দান ও সংযোজন করা সম্ভব উভয়পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে। তবে এর জন্য দেশে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান ও সংযোজন সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা জরুরি, যা মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। উলে¬খ্য, গত শুক্রবার গাজীপুরে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল এবং ভারতের ডা. রেলা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের মধ্যে লিভার প্রতিস্থাপন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হলেও এখনো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের সর্বাধুনিক সুযোগ—সুবিধা সংবলিত বিশেষায়িত হাসপাতাল, ডাক্তার—নার্স—শল্য চিকিৎসকসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। দুর্নীতি ও অদক্ষতাসহ রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতাও। চিকিৎসকদের অভিযোগ, কাজের ভালো পরিবেশ না পাওয়ায় তারা তাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিতে পারছেন না। ফলে, একদিকে রোগীরা প্রত্যাশিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের চিকিৎসকদের সুনামও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সুচিকিৎসা না পেয়ে তুলনামূলক উন্নত চিকিৎসার আশায় রোগীদের অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন বা যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই দেশের রোগীদের আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসাপ্রাপ্তি এবং চিকিৎসকদের কাজের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে যুগোপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি।