সমাজের কথা ডেস্ক : শ্রীলংকার বিপক্ষে ১০২, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৪ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৯ রানে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই তিনশর বেশি স্কোর গড়েছে দলটি। তাদের ভয়ানক বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখেছে বিশ্ব। আজ মুম্বাইয়ের ব্যাটিং—স্বর্গ উইকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এমন একটি দুরন্ত দলের বিপক্ষে কতটা এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে মাঠের লড়াইয়ে—ই।
টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপে খাদের কিনারায় সাকিববাহিনী। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে জয় না পেলে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটা আরও মলিন হবে তাদের। চার ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর টানা হারের রেকর্ড। এমনভাবে দল হারছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ ছড়াতে পারবে কিনা বাংলাদেশ— এ নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেউ কখনো কাউকে ছোট কিংবা বড় করে ভাবার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট দিনে যে কেউ সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারে এবং দিনটি নিজেদের করে নিতে পারে। যে কাজটি এবার করে দেখিয়েছে নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তান। এই শক্তিমান দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েই চলতি বিশ্বকাপে অঘটনের জন্ম দিয়েছেন ডাচরা। ওই ম্যাচটি আজ সাকিবদের জন্য অনুপ্রেণার হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে আরও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অতীত রেকর্ডে দেখা যায়, বিশ্বকাপ আসরে আগে চারবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে দুদল। এর মধ্যে দুদলই সমান দুটি করে জয় পেয়েছে। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রান সংগ্রহ করেন লাল—সবুজের জার্সিধারীরা।
ওই ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন সাকিব আল হাসান। এবার সাকিবের নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে খেলছে বাংলাদেশ। বাঁ ঊরুর চোট কাটিয়ে আজ খেলতে নামবেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। তিনি ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকানদের আটকাতে হলে কৌশলে নতুনত্ব আনতে হবে। আর সেই কাজটি সাকিবের মস্তিষ্ক দ্বারাই সম্ভব। শুধু গত বিশ্বকাপে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স নয়, গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে বাংলাদেশ তিন ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ ২—১ তে জিতেছিল। ওই সিরিজ জয়ের সাফল্যও টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের বাড়তি জ্বালানি হতে পারে। এ ছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকানরা। তাদের ব্যর্থ করতে হলে অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। বাংলাদেশের পেসাররা বিশ্বকাপে ভালো খেলছেন না। বিশেষ করে নতুন বলে পাওয়ার প্লেতে ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারছেন না তারা। স্পিনাররা ভালো ভূমিকা রাখছেন। এই স্পিন শক্তিতেই আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এগিয়ে বাংলাদেশ। আর যদি স্পিনাররা কার্যকর হতে পারেন, তা হলে বিপাকে পড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাকিব দলে ফেরায় একাদশে আবার রদবদল আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন বাড়তি স্পিনার খেলাতে পারে বাংলাদেশ। আগের প্রতিটি ম্যাচে তিন পেসার খেলালেও মুম্বাইয়ে দুই পেসার নিয়ে নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস অ্যাটাক খুবই ভয়ঙ্কর। যেখানে কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এগিডি, মার্কো জেমসেনের ধারালো গতির বল সামলাতে হিমশিম খেতে হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। অস্ট্রেলিয়ান ও ইংলিশদের বেশ ভুগিয়েছেন প্রোটিয়া বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। আজকের ম্যাচেও জ্বলে উঠতে পারেন তিনি।
আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেটি হলো— মুম্বাইয়ের মাত্রারিক্ত তাপমাত্রা। প্রচ— গরম সেখানে। এর মধ্যে ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে দক্ষতা দেখাতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছেন, এ সমস্যা দুদলের মধ্যেই হবে। আগের ম্যাচে গরমের মধ্যে ব্যাটিং করতে গিয়ে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের! সেই বর্ণনা ম্যাচশেষে দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান ক্লাসেন। তাই মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি গরম সহ্য করার সংগ্রামেও অবতীর্ণ হতে হবে ক্রিকেটারদের।