১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় পণ্য বন্ড
180 বার পঠিত

সমাজের কথা ডেস্ক : আর্থিক খাতে বিনিয়োগের জন্য অন্যতম পণ্য বন্ড। যে কোনো ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্যাংকের আমানত বা ডিপোজিট রেখে যে সুদ পাওয়া যায়, সাধারণত বন্ডের মুনাফা বা সুদ তার চেয়ে কিছুটা বেশি দেওয়া হয়। এ কারণে বন্ড এখন বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানির বিপরীতে বন্ড ইস্যু করছে। এসব বন্ডের কোনো কোনোটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন হচ্ছে। আবার কিছু বন্ড কেনাবেচা হচ্ছে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে। আছে সরকারের ট্রেজারি বন্ড। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে যেসব বন্ড ইস্যু করা হয়, সেগুলো শেয়ারবাজারের মাধ্যমে কেনাবেচা করা যায় না। সাধারণত বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান বা বন্ডের ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব বন্ড কেনাবেচা করতে হয়।

শেয়ার হচ্ছে কোম্পানির মালিকানার অংশ। আপনি কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনছেন মানে ঐ কোম্পানির মালিকানার অংশীদার হচ্ছেন। কোম্পানি লাভ করলে সেই ক্ষেত্রে বছর শেষে ঘোষিত লভ্যাংশের বিপরীতে শেয়ারের আনুপাতিক হারে মুনাফা বা লভ্যাংশ পাবেন। এমনকি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগেরও ক্ষমতা থাকবে। সাধারণত বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে এ ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায়। আর বন্ড হচ্ছে ঋণ পণ্য। বন্ডে বিনিয়োগের সঙ্গে মালিকানা অর্জনের কোনো বিষয় নেই। শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বছর শেষে কোম্পানির লাভের ওপর নির্ভর করে মুনাফা বা লভ্যাংশ মেলে। আর বন্ডের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত সুদ বা মুনাফার নিশ্চয়তা থাকে।

সাধারণত সব বন্ড সবাই কিনতে পারে না। বন্ড ইস্যুর আগেই ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নিজেরাই ঠিক করে নেয় কাদের কাছে তারা এ বন্ড বিক্রি করবে। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বন্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ড ইস্যু করে, সেসব বন্ড প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মতো শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে কেনা যায়। সেই ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আর যেসব বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, সেগুলো শেয়ারবাজার থেকে যখন খুশি তখন কেনাবেচা করা যায়।

বন্ড হচ্ছে একধরনের ঋণপত্র। এ বন্ড বিক্রি করে সাধারণ মানুষ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূলধন বা অর্থ সংগ্রহ করে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান। সরকার থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ের কোম্পানি যে কেউ বাজারে বন্ড ইস্যু বা ছাড়তে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণত ট্রেজারি বন্ড ছেড়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত সরকারের হয়ে ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারের বাইরে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যে বন্ড ইস্যু করে, তার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড ছাড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অনুমতির দরকার হয়।

সাধারণভাবে আমাদের দেশে বন্ড দুই ভাবে পরিচিত। প্রথমটি ট্রেজারি বন্ড, দ্বিতীয়টি করপোরেট বন্ড। করপোরেট বন্ডের মধ্যে আবার দুইটি ভাগ আছে। এর একটি ইসলামি শরিয়াহ্—ভিত্তিক বন্ড, বর্তমানে যা দেশে সুকুক বন্ড হিসেবে পরিচিত। আর অন্যটি প্রচলিত বা কনভেনশনাল বন্ড। কনভেনশনাল বন্ড আবার কয়েক ধরনের। তার মধ্যে রয়েছে পারপিচুয়াল বন্ড ও জিরো কুপন বন্ড।

ব্যাংক বা পুঁজিবাজার থেকে ট্রেজারি বন্ড কেনা যায়। তবে সব ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে না। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত ডিলার ব্যাংকই ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। যে ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে, সেই ব্যাংকে হিসাব খুলে এ বন্ড কেনা যাবে। আর শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বন্ড কেনার ক্ষেত্রে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব থাকতে হবে।

ট্রেজারি বন্ড মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করা যায়। সেক্ষেত্রে যে ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়, ঐ ব্যাংকের মাধ্যমেই তা নগদায়নের সুযোগ রয়েছে। আর পুঁজিবাজার থেকে কেনা হলে পুঁজিবাজারেই তা যে কোনো সময় বিক্রয় করা যায়।

সাধারণত ট্রেজারি বন্ড বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। যেমন দুই বছর, পাঁচ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বন্ড ইস্যু করে। তাই বেসরকারি কোম্পানির বন্ডের চেয়ে এ বন্ডে বিনিয়োগকে অনেকটা নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কুপননির্ভর বন্ড হচ্ছে এমন বন্ড, যার বিপরীতে মুনাফা বা সুদ নির্দিষ্ট করে কুপন ইস্যু করা হয়। এ ধরনের বন্ড আবার দুই রকমের। পারপিচুয়াল বা স্থায়ী বন্ড ও অবসায়িত বা মেয়াদি বন্ড। পারপিচুয়াল বন্ডের কোনো মেয়াদ থাকে না। এটি মেয়াদহীন একটি বন্ড। আর মেয়াদি বন্ড নির্ধারিত মেয়াদ শেষে অবসায়িত বা বাতিল হয়ে যায়।

অন্য দিকে জিরো কুপন বন্ডও একটি মেয়াদি বন্ড, যা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ইস্যু করা হয়। পারপিচুয়াল ও জিরো কুপন বন্ড উভয় ক্ষেত্রেই বছরভিত্তিক বা ষাণ্মাসিক সুদের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কীভাবে সুদ পরিশোধ করা হবে, তা অনুমোদনের সময় উল্লেখ করা হয়।

সাধারণত পারপিচুয়াল বন্ডে কুপন বা সুদের হার নির্ধারিত থাকে। বিনিয়োগকারীরা সে অনুযায়ী সুদ পেয়ে থাকেন। আর জিরো কুপন বন্ডে কোনো সুদ নির্ধারিত থাকে না। এ বন্ড বিক্রি হয় সাধারণত ডিসকাউন্ট বা সাশ্রয়ী দামে।

বন্ড ছেড়ে ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি মূলত অর্থ সংগ্রহ করে। অর্থ সংগ্রহ করা সব সময়ই কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। তার জন্য মূল্যও দিতে হয়। আরেক দিক থেকে যারা বিনিয়োগ করেন, তাদের ঝুঁকিও বেশি। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি কখনো কোনো কারণে দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানের যা সম্পদ আছে, তা বিক্রি করে সবার আগে আমানতকারীর দায় মেটানো হয়। সব পাওনা পরিশোধের পর যদি কিছু থেকে যায়, তবে সেখান থেকে কিছু অর্থ ফেরত পান অর্থ জোগানদাতারা। এ কারণে অর্থ জোগানদাতাদের আমানতকারীর চেয়ে কিছুটা বেশি সুদ দেওয়া হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram