সমাজের কথা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। অনেক গ্রামে তাই জেনারেটর ভাড়া নিয়ে মোবাইলে চার্জ দিচ্ছেন মানুষ। এতে মোবাইল প্রতি খরচ পড়ছে ২০ টাকা।
রেমালের প্রভাবে রোববার রাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডালপালা ভেঙে, খুঁটি হেলে পড়া, ট্রান্সমিটার বিকলসহ বিভিন্ন স্থানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ঝড় থামার পর মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ফরিদপুর পৌর এলাকা ছাড়া নয় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ চালু করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এস এম নাসির উদ্দিন।
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না বাজারে মামুন শেখের জেনারেটর ভাড়া করে মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ করেছেন কয়েক গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।
মোবাইল চার্জ দিতে আসা ময়না গ্রামের বাসিন্দা ও প্রসাধন ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম বলেন, “তিন দিন ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ না আসায় আমরা কয়েকটি গ্রামের জেনারেটরে মোবাইল প্রতি ২০ টাকায় চার্জ নিয়েছি। বিদ্যুৎ না আসলে আবার হইতো রাতে অনেকেরই মোবাইলে চার্জ দিতে হবে জেনারেটরে।”
মোবাইলে চার্জ নেওয়া রংমিস্ত্রি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মোবাইল ছাড়া সময়ই কাটে না। অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে সময় কাটাই। পৌর শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও গ্রামে এখনো সংযোগ চালু হয়নি। জেনারেটর মালিক ময়না গ্রামের মতিয়ারের ছেলে মামুন শেখ এ ব্যবস্থা করেছেন।”
ভাঙ্গা উপজেলার কলেজ শিক্ষক দিলীপ দাস বলেন, “রোববার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে। এই বাতাসে এ এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা পড়ে গেছে। রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিহীন এ উপজেলার কয়েকটি গ্রামা। সেই সঙ্গে ফোনের নেটওয়ার্কও কাজ করছিল না।”
মধুখালী পৌর এলাকার মেছড়দিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান জানান, “রেমালের কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মধুখালীতে রোববার থেকে বিদ্যুৎ নেই। মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও ১১টি ইউনিয়নের অনেক জায়গায় এখনও চালু হয়নি।”
মঙ্গলবার বিকালে আলফাডাঙ্গার সীমান্তবর্তী এলাকা সহস্রাইল গ্রামের ইউপি সদস্য আফরোজা বেগম বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্তও আমাদের সহস্রাইল বাজারসহ শেখর ইউনিয়ন ও রূপাপাত ইউনিয়নের ৩০-৪০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি।”
তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করাও যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নম্বরগুলোয় ফোন দিলে শুধু ব্যস্ত দেখাচ্ছে।”
তবে মঙ্গলবার বিকালে ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে টানা বৃষ্টির কারণে রোববার ও সোমবার মনিটরিং বাদে লাইনের কোনো কাজই আমরা করতে পারিনি। মূলত মঙ্গলবার থেকে সব এলাকায় কাজ চলছে।
“জেলা শহরে তেমন কোনো ক্ষতি না হওয়ায় সেখানে সংযোগ চালু ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার মেইন লাইনসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বাদে সব লাইন চালু করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, তবে যেখানে বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়া, খুঁটি হেলে পড়া, ট্রান্সমিটার বিকলসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল তা মেরামত করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার কাজ চলছে।
“তাছাড়া সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলায় ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনের কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে লাইন চালু করার জন্য বেশি লোকজন পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার সদরপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে ৫-৬টি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও চরভদ্রাসনের ঝাউকান্দা এলাকার দুটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ছাড়া ঝড়ে গাছপালার ঢাল ভেঙে কিছু এলাকায় গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরে ৪-৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
ফরিদপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ বাবর বলেন, “রেমালের ব্যাপারে জেলাবাসী সতর্ক অবস্থানে ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে জেলার দুইটি উপজেলায় কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা পরিমাণে সীমিত।”
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “ঝড়ে ফরিদপুরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে চরভদ্রাসনে দুটি বাড়ি ও কিছু জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়া ও ডালপালা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।”
-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম