নিজস্ব প্রতিবেদক : শোকাবহ পরিবেশের মধ্যে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলো বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীনের মরদেহ। যশোর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর যশোর ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিজিবি সদস্যরা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত রইশুদ্দীন ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির বেনাপোল সীমান্তের ধান্যখোলা জেলেপাড়া বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে বিএসএফ’র গুলিতে তিনি নিহত হন।
বিজিবি সূত্র জানায়, বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে যশোরের বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শার্শার শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে তার মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পরে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের জানাযার নামাজ শেষে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) নিহত সদস্য রইশুদ্দীন লাশ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) জোহর বাদ জানাযার নামাজ শেষে অ্যাম্বুলেন্সে যোগে সড়কপথে দুপুর আড়াইটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়ায় উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে যশোর বিজিবির একটি টিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল।
এর আগে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে শিকারপুর বর্ডারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) নিহত সদস্য রইশুদ্দীন হস্তান্তর করা হয়।
লাশ হস্তান্তর শেষে বেনাপোল বর্ডারে নেওয়া হয়। সেখান থেকে লাশ যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়। এরপর দুপুরে লাশটি যশোর ৪৯ বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সেখানে লাশের জানাজা শেষে রইশুদ্দীন গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়ায় নেয়ার জন্য যাত্রা করে। তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পেঁৗছানোর পর সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বুধবার রাতে সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে ভারতের সুটিয়া সীমান্ত পথে গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায় পাচারকারীরা। এ সময় বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীন গতিরোধ করার চেষ্টা করলে চোরাকারবারিরা গরু ফেলে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন সুটিয়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ৭ রাউন্ড গুলি চালালে দুই চোরাকারবারি ভারতীয় অংশে আহত হয়। এরপর বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়া গরুগুলো বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করতে গেলে বিএসএফ রইশুদ্দীন নামে এক বিজিবি সদস্যকে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে বিএসএফ’র গুলিতে তার মৃত্যু হয়।
বিজিবির যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২২ জানুয়ারি আনুমানিক ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিজিবি ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে। পরে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক মোহাম্মদ রইশুদ্দীন মারা যায়।