সমাজের কথা ডেস্ক : ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক অভ্যুদয়ের গৌরবময় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দশম দিন। ১৯৭১ সালে এ দিনটি ছিল শুক্রবার। বাস্তবতা অগ্রাহ্য করে এদিন মসজিদে মসজিদে পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সংহতি এবং যুদ্ধে পাকসেনাদের সাফল্য কামনা করে বিশেষ মুনাজাতের আয়োজন করা হয়। কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের আকুতির কাছে তা যেন তুচ্ছ। লড়াকু ও অদম্য স্বাধীনতা সৈনিকদের অব্যাহত আন্দোলন চলছে। চতুর্দিক থেকে হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত ও জনপদ শত্রুমুক্ত করার সুখবর আসছে। একাত্তরের এদিন থেকেই মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ঘনিয়ে আসতে থাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা ‘বিজয় কবে হবে’ প্রশ্নের উত্তর পেতে শুরু করে।
রণাঙ্গনে ‘মুক্তি’ শব্দটি আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয় নিজেদের ‘প্রবল প্রতাপশালী’ মনে করা পাক সৈন্যদের কাছে। হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে দ্রুত তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। ফলে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজী পালাবার পাঁয়তারা করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘বিবিসি’ তার এই গোপন অভিসন্ধি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজী স্বীয় দুর্বলতা ঢাকার জন্য এদিন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন, ‘কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা, আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনও আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।’
অথচ আগের দিন (৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিকে গভর্নর মালিকের দেয়া এক বার্তার ১০ ডিসেম্বর গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ আবেদন হস্তান্তর করেন। এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরও লেখা ছিল, ‘যেহেতু সংকটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই।’
এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি ‘মালিক—ফরমান আলী বার্তা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। পরদিন তা আবার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এদিকে, এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বারবার রকেট হামলা অব্যাহত রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করেছে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রুবাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।